রমজানে পর্যাপ্ত ঘুমতে যা করনীয়

ঘুম অতি প্রয়জনীয়। বছরের অন্যান্য সময় রাতে ঘুমানোর পর একবারে সকালে পরিপূর্ণ ভাবে ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু রমজানে তার ব্যতিক্রম ঘটে। রাতে একবার ঘুমানোর পর শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে সেহেরি খেয়ে ঘুমানোর ফলে পরিপূর্ণভাবে ঘুম হয়না তাতে সারাদিন ঘুম ঘুম আর ক্লান্ত , মেজাজ খিটখিটসহ সারা দিন কাজেও মনোযোগ আসে না।

রমজান মাসে সাহরি খেতে শেষরাতে উঠতে হয় বলে একটানা ঘুমানো যায় না। এতে আমাদের ঘুমের স্বাভাবিক সাইকেলে পরিবর্তন ঘটে। রোজার সময় সুস্থ থাকতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মতো পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শারীরিক সুস্থতার জন্য দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুম দরকার। আমরা সারা দিন যে পরিমাণ কাজ করি, তাতে শরীরের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোর পুনর্নির্মাণ এবং ফের সতেজ হয়ে ওঠার জন্য বিশ্রামের দরকার হয়। ঘুমের মাধ্যমে শরীর বিশ্রাম পায়। এ জন্যই দেখা যায়, কেউ যদি অতিরিক্ত কাজ করে এবং কম ঘুমায়, তাহলে তার শরীর ভেঙে যায়, ক্লান্তি বোধ করে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। কাজকর্মে কম ঘুমের প্রভাব পড়ে।

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে বায়োলজিক্যাল ক্লক নামে একটি প্রাকৃতিক ঘড়ি রয়েছে, যাকে দেহঘড়ি বলা হয়। চিকিত্সাবিজ্ঞানে এর নাম সার্কাডিয়ান রিদম। এই প্রক্রিয়াটি আমাদের ঘুমানো এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠার পেছনে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ার কারণে আমরা সাধারণত একটানা সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকি। কিন্তু কোনো কারণে এই সময়ের মধ্যে জেগে উঠতে হলে ব্যাঘাত ঘটে সার্কাডিয়ান রিদমে। রমজান মাসে সাহরি খাওয়ার জন্য শেষরাতে ঘুম থেকে উঠতে হয়। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যেতেও নানা কারণে দেরি হয়। আবার সাহরির পর অফিস ও দিনের কাজের জন্যও বেশিক্ষণ ঘুমানো যায় না। ফলে রমজান মাসে একটানা বেশি সময় ঘুমানোর সুযোগ নেই। এ জন্য রাতে যত তাড়াতাড়ি ঘুমানো যায় তত ভালো, বিশেষ করে তারাবি নামাজ পড়ে যত দ্রুত ঘুমানো যাবে, তত বেশি ঘুমানোর সময় পাওয়া যাবে। দেরি করে ঘুমালে সাহরি খেতে উঠতে কষ্ট হবে। ঘুমও কম হবে।

এ জন্য সবচেয়ে ভালো হয় রমজান মাসের জন্য একটি রুটিন করে নেওয়া। একেকজন মানুষের জীবনযাপন একেক রকম। এ জন্য যার যার সুবিধামতো একটি রুটিন করে নেওয়া ভালো। রমজান মাসে যদি কর্মস্থলে সকাল সকাল পৌঁছতে হয়, তবে রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের সাহরির পর বেশিক্ষণ ঘুমানো সম্ভব হয় না। যদি তেমন ব্যস্ততা না থাকে, তবে সাহরির পরও ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে নেওয়া ভালো। তবে যে যখনই ঘুমান না কেন, মনে রাখতে হবে দিন ও রাত মিলিয়ে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম হচ্ছে কি না। এর কম ঘুম হলে তা আমাদের শরীরে নানাভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

এ জন্য রমজান মাসে রাত ১১টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ুন। ৩টার সময় উঠে সাহরি খেয়ে ফজর নামাজ পড়ে ভোর ৫টায় আবার ঘুমিয়ে যান। ৭টায় উঠে অফিস বা কাজের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ুন। তাহলে সাহরির আগে চার ঘণ্টা এবং পরে দুই ঘণ্টা মিলিয়ে মোট ছয় ঘণ্টা ঘুমাতে পারবেন। এ ছাড়া দিনের মধ্যে একটু অবসর পেলে আধাঘণ্টা চেয়ারে বা ডেস্কে ঘুমিয়ে নিতে পারেন। এই ঘুমটাও আপনাকে সতেজ ও স্বাভাবিক থাকতে সাহায্য করবে।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.