জার্মানিতে বিশাল পরিবহণ ধর্মঘট

জার্মানিতে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ করে দিতে বিশাল ‘সতর্কতামূলক’ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিষেবা ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন ভ্যার্ডি এবং রেল ও পরিবহণ ক্ষেত্রের শ্রমিক সংগঠন ইভিজি৷ ভ্যার্ডির সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ এবং ইভিজির প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার৷ সরকার ও পৌর স্তরের শ্রমিক-কর্মীদের জন্য মোটা অংকের বেতনবৃদ্ধির দাবি করছে তারা৷ ভ্যার্ডি ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি চাইছে, ইভিজি চাইছে ১২ শতাংশ৷ সোমবারই মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে দরকষাকষি আবার শুরু হবার কথা৷

ভ্যার্ডি-র মতে, প্রথমে করোনা মহামারি, তারপর ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিক-কর্মীদের দূরাবস্থা অন্তত কিছুটা হলেও লাঘব করতে এই দাবি ন্যায্য৷ উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে গোটা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অঞ্চল ও ক্ষেত্রে ধর্মঘটের মাধ্যমে কর্মদাতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে শ্রমিক সংগঠন৷ ভ্যার্ডি-র প্রধান ফ্রাংক ভ্যার্নেকে বলেন, এটা হাজার হাজার কর্মীর বেঁচে থাকার প্রশ্ন৷

অন্যদিকে সরকার ও পৌর স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলি শ্রমিক সংগঠনের এই দাবিকে অবাস্তব বলে বর্ণনা করছে৷ তাদের মতে, সরকারি কোষাগারে এমন অস্বাভাবিক বেতনবৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই৷ বিশেষ করে পরিবহণ ক্ষেত্রে বেতন বেশি বাড়ালে ভাড়া ও বাড়তি কর চাপিয়ে সেই অর্থ সংগ্রহ করতে হবে৷ জার্মানির রেল সংস্থা ‘ডয়চে বান’ এই ধর্মঘটকে ‘সম্পূর্ণ মাত্রাহীন, ভিত্তিহীন ও অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বর্ণনা করেছে৷

ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে রাশিয়া থেকে সস্তায় গ্যাস সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে জ্বালানির দাম হুহু করে বেড়ে গেছে৷ ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর মূল্য থেকে শুরু করে বাসাভাড়া এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গেছে৷ জ্বালানি সংকট দেখা না দিলেও মূল্যস্ফীতির রাশ টান টানতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ইউরো এলাকার তুলনায় জার্মানির মূল্যস্ফীতির হার বেশি থেকেছে৷ ফেব্রুয়ারি মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম গত বছরের তুলনায় নয় দশমিক তিন শতাংশ বেশি ছিল৷

সোমবারের ধর্মঘটের ফলে নিত্যযাত্রীসহ সাধারণ মানুষ ব্যাপক সমস্যার মুথে পড়ছেন৷ বিশেষ করে বাসায় থেকে ‘হোম অফিস’ করার সুবিধা যাদের নেই, তাদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে৷ জার্মানির হাইওয়ে পরিচালন সংস্থার কর্মীরাও ধর্মঘটে যোগ দেওয়ায় অনেক হাইওয়েতে অবরোধের আশঙ্কা রয়েছে৷ ভ্যার্ডি-র প্রধান ভ্যার্নিকে মানুষের দুর্দশার কথা মেনে নিয়েও বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ও কর্মীদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে এ ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন৷ পণ্যের পরিবহনে বিঘ্ন এড়াতে জার্মানির পরিবহণমন্ত্রী ফল্কার ভিসিং রোববার ট্রাক চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এএফপি

অর্থসূচক/এএইচআর