মেধাবীদের বাদ দিয়ে সোনালী ব্যাংকে পদোন্নতি

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে পদোন্নতি দিতে নুতন আইন চালু হয়েছে। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাদ পড়তে যাওয়া ব্যাংকটির পদোন্নতিযোগ্য শত শত কর্মী। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির অফিসার থেকে জিএম পদ পর্যন্ত পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২। অনুসরণ করা হচ্ছে পর্ষদের ৮১০ তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত। এই অনিয়ম বন্ধ ও আগের নিয়মে পদোন্নতি প্রক্রিয়া চালু করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ব্যাংকটির শতাধীক কর্মকর্তা।

জানা যায়, এতোদিন সোনালী ব্যাংকে শূন্যপদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুইজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নুতন আইন চালু হয়েছে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতির ভাইভার জন্য শুধু সিনিয়রিটি তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পায়তারা শুরু হয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।

গত কয়েক বছরের তথ্য যাচাই-বাছাই ও গভীর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে দ্রুত পদোন্নতি হয়ে যায়। তবে সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তি বা গোষ্টী স্বার্থে প্রতিবার নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা যুক্ত করে অনাকাঙ্খিত সময়ক্ষেপণ করে বছরের শেষে এসে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংকের দক্ষ ও মেধাবী কমকর্তারা এখন সকল জায়গায় পিছিয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় সোনালী ব্যাংকে একটি স্থায়ী নীতিমালা করা প্রয়োজন। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্টীর স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না বরং সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হবে। যতদিন না এরকম নীতিমালা করা সম্ভব ততদিন কোনো বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকাই বাঞ্চনীয়। কারণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি সততা, দক্ষতা ও মেধার পরিবর্তে কেবল জ্যেষ্ঠতাকেই বেছে নেওয়া হয় তাহলে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবে। চ্যালেঞ্জিং পদগুলো সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে দূর্নীতির আখড়া হয়ে উঠবে বলে মনে করছে সোনালী ব্যাংকের একাধিক সূত্র।

চিঠিতে বলা হয়, ৮১০ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন জন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাতকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন।’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২ এর সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতিতো দুরের কথা সাক্ষাতৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।

এতে আরও বলা হয়, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকুরি প্রবিধানমালা, ২০২২’ এ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ বিষয়ের ৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘এই প্রবিধানমালা মোতাবেক এবং তফসিলে বর্ণিত শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে, কোনো কর্মচারীকে পরবর্তী উচ্চতর পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। কিন্তু কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোন কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করিতে পারিবেন না।’’

এদিকে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকারদের পদোন্নতি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে।’ অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের ১:৩ নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক।

এ বছর সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থেকে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০, ৯১ ও ১৩ জন। তার বিপরীতে সম্ভাব্য পদোন্নতিযোগ্য পদের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০, ১৯ ও ৩ জন। কিন্তু সিনিয়রিটি বিবেচনায় ভাইভার জন্য মনোনিত হবেন ১৮০, ৫৭ ও ৬ জন। বঞ্চিত হবে মেধাতালিকা। সুতরাং আলোচ্য পদোন্নতি নীতিমালা স্ববিরোধী ও চাকুরি প্রবিধানমালার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। যেখানে সততা ও ন্যায়ের প্রতিফলন নেই।

অর্থসূচক/সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.