মায়ের নাম লেখা যাবে অভিভাবক হিসেবে: হাইকোর্ট

এখন থেকে বাবা না থাকলে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে বাবার পরিচয় ব্যবহার করতে না চাইলে যে কেউ সরকারি ফরম পূরণের ক্ষেত্রে মা কিংবা আইনগতভাবে অন্য কোনও অভিভাবকের নাম যুক্ত করতে পারবেন বলে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আইনুননাহার সিদ্দিকা, এস এম রেজাউল করিম ও আয়েশা আক্তার। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।

আইনজীবীরা বলছেন, ঐতিহাসিক এই রায়ের ফলে এখন থেকে সরকারি যে কোনও ফরম পূরণের ক্ষেত্রে আগের শুধু ‘বাবার নাম’-এর স্থলে আরও দুটি অপশন যুক্ত হলো। এতে করে কেউ চাইলে, বাবার পরিচয় ব্যবহার না করেও শিক্ষা সনদ পেতে ফরমপূরণ, পাসপোর্টসহ সব ধরনের সরকারি নথিতে মা কিংবা আইনগতভাবে বৈধ অভিভাবকের নাম লিখতে পারবেন।

২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে না পারায় ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। উল্লেখ্য যে, মা ও সন্তানকে কোনোরূপ স্বীকৃতি না দিয়ে বাবার চলে যাওয়ার পর ওই তরুণী তার মায়ের একার আদর-স্নেহে বড় হচ্ছিলেন। পরে এ ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন- বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থি ও বিশেষভাবে শিক্ষার অধিকারে প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এ বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থি এবং অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেন।

একইসঙ্গে বর্তমানে কোন কোন শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বাবা ও মা উভয়ের নাম সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে হয়, তার একটি তালিকা এবং যেসব যোগ্য শিক্ষার্থী তাদের বাবার পরিচয় উল্লেখ করতে অপারগ তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ২০২১ সালের ৬ জুন ব্লাস্ট আবেদনকারীদের পক্ষে একটি সম্পূরক হলফনামা আদালতে দাখিল করে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.