বিদায়ী অর্থবছরে বেসরকারি ঋণে প্রবৃদ্ধি ১৩.৬৬ শতাংশ

বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছরের জুন শেষে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সেই হিসাবে অর্থবছরের ব্যবধানে বেসরকারি ঋণে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। শুধু এক অর্থবছরে নয়, এবারের প্রবৃদ্ধি গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

এর অর্থ হলো ২০২১ সালের জুন মাসের চেয়ে এই বছরের জুন মাসে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

যদিও মুদ্রানীতিতে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, তার থেকে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ পয়েন্ট কম নিয়েই শেষ হয়েছে অর্থবছর। ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।

করোনা মহামারির প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকগুলো খারাপ হয়ে যাওয়ার মধ্যেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধিতে এমন সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই বাড়তে থাকে আমদানি। কেননা দেশে এখন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। আবার দেশের রফতানি খাতও এখন চাঙা। তাই নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ শিল্প খাতের অন্য সব সরঞ্জাম আমদানিও বেড়েছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে। নতুন অর্থবছরেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

এদিকে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি বাড়ার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তারা বলেছেন, বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়ন হওয়ার সাথে সাথে দেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহককে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। আর এটি বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে।

তারা বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছিল। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যে প্রণোদণা ঘোষণা করেছিল, তাতেও এর অবদান ছিল। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশে বিনিয়োগের একটি অনুকুল পরিবেশও দেখা দিয়েছিল। পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফূলী টানেলসহ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে উদ্যোক্তারা নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে বিনিয়োগে নেমেছেন। ব্যাংকগুলোও এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে।

সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণের একটি গতি এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকদের এলসি খুলতে বেশি টাকা লেগেছে। তাতেও ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, টানা আট মাস ধরে বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশে উঠেছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে। এপ্রিল মাসে তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। মে মাসে তা আরও বেড়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ওঠে। সবশেষ জুন মাসে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে।

এর আগে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর থেকেই কমতে থাকে এই সূচক।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.