রুশ সেনারা আমাকে ধর্ষণ করল, আমার স্বামীকে করল হত্যা

৭ মার্চ, আমি ও আমার স্বামী দু’জনেই বাসায়। তখন একজন বিদেশি সেনা হুট করে ঘরে ঢুকে পড়ে। পিস্তল ঠেকিয়ে আমাকে পাশের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল, “কাপড় খোল, আর না হলে গুলি করব।’। এভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে সে আমাকে ধর্ষণ করতে থাকে।

বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনিই লোমহর্ষক কাহিনী তুলে ধরেন ৫০ বছর বয়সী ইউক্রেনিয় অধিবাসি আনা (ছদ্মনাম)।

আনা জানায়, আমাকে যে ধর্ষণ করেছে সে ছিল রাশিয়া জোটের একজন চেচেন যোদ্ধা। সে ছিল তরুণ। শারিরীকভাবে সে ছিল হালকাপাতলা। যখন সে আমাকে ধর্ষণ করছিল তখন আরও ৪ জন সেনা প্রবেশ করল। আমি ভাবলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু তারা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিল। আমি আর তাকে দেখি নি। তবে রুশ সেনাদের নানা ইউনিট আমাকে রক্ষা করে।

সেনারা যাওয়ার পর আনা তার স্বামীর কাছে ফিরে যায়। কিন্তু সে্সময় তিনি তার স্বামীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারার কারণে ঘরেই তার মৃত্যু হয়। পরে প্রতিবেশির সহযোগিতায় তিনি তার স্বামীকে বাড়ির উঠানে কবর দেন।

আনা ব্যক্ত করেন, যে রুশ সেনার তাকে বাঁচাল, তাদেরকে তিনি ঘরে থাকতে দিয়েছিলেন। তারা প্রায়ই সময় মদপান করত। যাওয়ার সময় তারা কিন্তু কোনকিছুই লুটপাট করে নি।

আনার বাড়ির পাশেই এমনিই আরেকটি ঘটনা ঘটল…

জোরপূর্বক আরেক মহিলাকে ধর্ষণ করে সেই চেচেন সেনা। আনার প্রতিবেশিরা জানায়, আনাকে ধর্ষণের আগে তাকে ধর্ষণ করে এবং তাকে হত্যা করে। চল্লিশ বছর বয়সী ওই মহিলাকেও পাশের একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘরের একটি বেডরুমে। ঘরটি সুচারুভাবে ছিল। কিন্তু সে সুসজ্জিত ঘরের ম্যাট্রেস ও কম্বলে এখন কেবল রক্তের দাগ আর দাগ। ঘরের এক কোণায় থাকা আয়নায় লিপস্টিক দিয়ে সে ঘাতক লিখেছিল ধর্ষিতাকে কোথায় দাফন করা হবে।

প্রতিবেশিরা জানান, দাফনের একদিন পরেই পুলিশ এসে তার নগ্ন শরীরটি কবরস্থান থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। তার গলার চারপাশে ছিল ছুরির আঘাত।

কিয়েভ অঞ্চলের পুলিশের প্রধান অ্যান্ড্রি নেবিতব বিবিসিকে জানান, এখান থেকে প্রায় ৩০ কিঃমিঃ দূরে এ রকম আরেকটি ঘটনার তদন্ত করছি। সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বামী-স্ত্রী তাদের একমাত্র সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। তখন ৯ মার্চ, বুধবার। রুশসেনারা ঘরে ঢুকে পড়লে স্বামী তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়, শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনটাকেই দিতে হয় রুশ সেনাদের হাতে।

নেবিতব আরো জানান, তার স্ত্রীকে দফায় দফায় ধর্ষণ করা হয়। একবার ধর্ষণ করে চলে যাওয়ার পর আবার তাকে ধর্ষণ করতে তারা আসে। এভাবে করে রুশসেনারা তার স্ত্রীকে দিনে তিনবার করে ধর্ষণ করত। ধর্ষকেরা তাকে হুমকি দিয়ে বলত যদি সে তাদের যৌনসঙ্গমে বাঁধা দেয় তাহলে তারা ছোট্ট শিশুকে হত্যা করবে। এ ভয়ে তিনি তাদের সাথে ধর্ষণকালে ধস্তাধস্তি করতেন না।

বিদায়কালে সেনারা তাদের আবাসস্থল পুড়ে দেয় এবং বাড়ির কুকুরগুলোকেও হত্যা করে। সেনার যাওয়ার পরপরেই, কনিষ্ঠ সন্তানকে নিয়ে তিনি পালিয়ে যান এবং নেবিতবের সাথে দেখা করেন বলে নেবিতবের টীমের সদস্যরা জানান।

তারা জানান, আমরা তার বক্তব্য রেকর্ড করেছি এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়েছি। আমরা ছবি তুলেছি সেনাদের বোমায় বিস্ফোরিত হওয়া বাড়িটির এবং পুড়ে যাও্য়া ছোট্ট শিশুটির বাইসাইকেল, পুতুল-ঘোড়া ও জুতার। প্রতিবেশিদের বাগানে শিশুটির বাবাকে দাফন করা হয়েছে। আমরা ময়নাতদন্তের জন্য তার মৃত শরীর কবর থেকে তুলেছি। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে তা পেশ করব।

এদিকে ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থার সদস্য লিউদিলা ডেনিসোভা বলছে, তারা এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনার আলামত সংগ্রহ করছে। বুচা শহর জবরদখলের সময় ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২৫ জন তরুণীকে একটি বাড়ির নিচতলায় রুশসেনারা ধর্ষণ করে। রুশসেনারা তাদেরকে বলেছে যে তারা তাদেরকে এমনভাবে ধর্ষণ করবে যাতে কেউ তাদের সাথে শারীরিক মেলামেশা করতে না পারে এবং তারা যাতে কোন সন্তান না নিতে পারে।

তিনি সে সময় ধর্ষিত অনেকের কাছ থেকে টেলিগ্রাম ম্যাসেজিংয়ের মাধ্যমে ‘সাহায্য চাই’ বার্তা ও ফোনকল রিসিভ করেন। এদের মধ্যে ২৫ বছর বয়সী এক মহিলা তাকে কল করে জানান যে তার চোখের সামনেই তার ১৬ বছরের বোনকে রাস্তায় ফেলে ধর্ষণ করা হয়।

পুলিশ প্রধান আরও বলেন, যে সকল যৌন সহিংসতা তাদের জীবনে ঘটেছে তা এ মুহুর্তে আমরা ক্রাইম ধরে নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সাক্ষ্য না দিচ্ছে। কারণ ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগ মানসিক সাহায্য চাইছে।

আমাদেরকে এসব ঘটনার বিবরণ বলতে গিয়ে ধর্ষিতা আনা প্রশ্ন রাখছেন, “আমি পুতিনের কাছে জানতে চাই কেন এমন হচ্ছে। আমি বুঝি না, আমরা তো আদি প্রস্তরযুগে বাস করছি না। কেন তিনি সমঝোতায় আসছেন না আর কেনই বা তিনি শুধু-শুধু মানুষ হত্যা ও ভূমি দখল করছেন।”

অর্থসূচক/এইচডি/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.