গরিব মানুষকে স্বস্তি দিতে আগামী বাজেটে কর্মপরিকল্পনা চায় সিপিডি

মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চাপে আছে। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ এখন অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাৎক্ষণিকভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

তারা মনে করে, আগামী বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে গরিব মানুষকে কিভাবে স্বস্তি দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে ধনীদের উপর করহার বাড়িয়ে গরিব মানুষের জন্য সরাসরি নগদ সহায়তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমানোর পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির জন্য ওএমএস কার্যক্রম বিস্তৃত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সিপিডি মনে করেন, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য আগামী অর্থবছরের প্রথম কয়েক মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। তারা বলেছে, আগামী বাজেটে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। রাজধানীর ধানমন্ডির সিপিডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির যে তথ্য দেওয়া হয়, বাস্তবের সঙ্গে তা মিলছে না। বাস্তবে জিনিসপত্রের দাম অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। এখন বলা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ। বেতনভাতা, মজুরি-এসব তো মূল্যস্ফীতির সাপেক্ষে বাড়ানো হয়। এখন বাজারে যদি জিনিসপত্রের দাম ২০ শতাংশ বাড়ে, তাহলে বর্ধিত মজুরি দিয়ে প্রয়োজন মেটানো যাবে না। তাই মূল্যস্ফীতির যথাযথ তথ্য থাকা উচিত। দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকির সুপারিশ করেন তিনি। এ ছাড়া বাজেটে সার, কৃষি উৎপাদন, উপকরণ ও প্রবাসী আয়ে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

একই বিষয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়টি অত্যন্ত কঠিন। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। এ অবস্থায়, নিম্ন আয়ের মানুষকে কীভাবে স্বস্তি দেয়া যায় সেটাই হওয়া উচিত আগামী বাজেটের মূল উদ্দেশ্য।

তিনি নির্বাচনের সময় ভোটের জন্য জনগণের কাছে যেতে হয়; কর খেলাপি ও ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়া হলে মানুষ খুশি হবে। কিন্তু এ দেশে করখেলাপি ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, বরং নির্বাচনের আগে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। আবার ঋণখেলাপিদের নানা ছাড় দেওয়া হয়। নির্বাচনের আগের বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ কমানোর জন্য অপ্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্প না নেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

সিপিডি মনে করে, প্রতিবছরের বাজেটের মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগও থাকা উচিত। কারণ, আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশের চারটি বড় উত্তরণ হচ্ছে। সেগুলো হলো ক. ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণ, খ. ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন, গ. ২০৩১ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ ও ঘ. ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। ওই সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করা, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করা, সিগারেট ও তামাকজাতীয় পণ্যের শুল্ক-কর বৃদ্ধি ও করপোরেট কর সমন্বয় করার সুপারিশ করা হয়েছে সিপিডির প্রস্তাবে।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কা সংকটও উঠে আসে। এ বিষয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় নয়, তবে শিক্ষনীয় । শ্রলিঙ্কার এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষনীয় আছে। কেননা শ্রীলঙ্কার এই পরিণতি একদিনে হয়নি। শ্রীলঙ্কা সময়মতো প্রকল্প শেষ করতে পারেনি। কিন্তু তার আগেই ঋণ পরিশোধের চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে এই বিষয়ে আমাদেরও সতর্ক হতে হবে। তাই আমাদের বড় প্রকল্পগুলো সুশাসনের সঙ্গে সময়মতো ও সাশ্রয়ীভাবে শেষ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.