সীমান্ত হত্যায় জড়িত বিএসএফ সদস্যদের শাস্তি দাবি এইচআরডব্লিউর

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের বিরুদ্ধে ওঠা সীমান্ত হত্যার অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনের নতুন অভিযোগের ঘটনার তদন্ত এবং জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।

আজ মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) এ সম্পর্কিত এক বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, ১০ বছর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারত সরকার বিএসএফকে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারকারীদের বিরুদ্ধে কিছুটা নমনীয় হতে এবং প্রাণঘাতী গুলির পরিবর্তে রাবার বুলেট ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল।

তবে ভারতীয় এবং বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলছে, দুই দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের ওপর বিএসএফ এখনো নিপীড়ন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।

গরু পাচার, চোরাচালান এবং অবৈধ সীমান্ত পারাপার বন্ধ করতে মোতায়েন করা বিএসএফ সবসময় বলে আসছে, শুধু হামলার শিকার হলেই তারা শক্তি ব্যবহার করে। তবে তাদের এ দাবির সত্যতা নিয়ে বরাবরই সন্দিহান মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ভারতীয় সরকার বিএসএফকে নমনীয় হয়ে গুলি ব্যবহার না করার যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা নতুন করে হত্যা, নির্যাতন এবং অন্য মারাত্মক ধরনের নির্যাতন রুখতে পারেনি।

তিনি বলেন, সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে জবাবদিহি করতে না পারার কারণেই দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে নতুন করে নির্যাতন এবং হয়রানির বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারত সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে সংযমী হতে এবং বেআইনি হত্যা বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিল এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার সময় ভারত দেশটিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধের আশ্বাসও দিয়েছিল।

এদিকে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা অধিকার’র দেওয়া এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে বিএসএফ ৩৩৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৫১ জনকেই হত্যা করা হয়েছে ২০২০ সালে।

ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা মাসুম ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএসএফের হাতে ১০৫টি হত্যার তদন্ত করেছে। তারা বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।

মাসুম আরও বলেছে, বিএসএফ সন্দেহভাজনদের বেআইনি আটক ও নির্যাতন করেছে এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদেরও হয়রানি ও হুমকি দিয়েছে।

বাংলাদেশ বরাবরই সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ করে আসছে। তবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নির্যাতনের ঘটনায় বিএসএফের কোনো সদস্যকে জবাবদিহি করার কোনো ঘটনা এইচআরডব্লিউ জানতে পারেনি বলে বিবৃতিতে অভিযোগ তোলা হয়।

এর মধ্যে বহুল আলোচিত ১৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারানোর পর তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল।

পরে ২০১৫ এবং ২০১৩ সালে বিএসএফের বিশেষ আদালতে দুই দফা বিচারের পর বিএসএফের অভিযুক্ত কনস্টেবলকে খালাস দেওয়া হয়। এ মামলায় নতুন করে বিচারের আবেদনটি এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.