আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা তালেবানের

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান৷ এরপর থেকে এখনও কোনো দেশের স্বীকৃতি না পেলেও চীন, ইরান, ভারতের মতো দেশগুলো একধরনের সম্পর্ক স্থাপন করেছে৷ যেমন জানুয়ারির শেষদিকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মাওলাউই আসাদুল্লাহ বিলাল করিমির অ্যাক্রিডিটেশন গ্রহণ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং৷

তবে চীনের দাবি, কূটনৈতিক এই অ্যাক্রিডিটেশন তালেবান শাসনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া নয়৷ যদিও তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর আফগানিস্তান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে৷

আল-জাজিরা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে চীনের কয়েকটি কোম্পানি তালেবানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে৷ এরমধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি একটি তেল চুক্তি রয়েছে৷ এর আওতায় প্রথম বছরে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীন৷ পরবর্তী তিনবছরে তা ৫৪০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে৷

এদিকে, তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে ইরান কূটনীতিবিদ হাসান কাজেমি কমিকে আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে৷ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও অত্র অঞ্চলের লাভের জন্য তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ জরুরি বলে মনে করে ইরান৷

ভারতের দৃষ্টিভঙ্গীও প্রায় একই৷ তারা আফগানিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর জোর দিচ্ছে৷

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ, আইসিজির এক প্রতিবেদন বলছে, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো কাবুলের শাসকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পক্ষে৷ ঐ অঞ্চলের এর কূটনীতিক আইসিজিকে বলেছেন, ‘আমরা তালেবান সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের মনোভাব পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকতে পারি না, কারণ আমরা ফ্রন্টলাইনে আছি৷’

ইন্ডিপেন্ডেন্ট থিংক ট্যাংক ‘আফগানিস্তান অ্যানালিস্টস নেটওয়ার্ক’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা থমাস রুটিগ মনে করেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হলে তা তালেবানের জন্য বিজয় হবে৷ তিনি বলেন, নারী অধিকারসহ তালেবানের নানা নিপীড়নমূলক নীতির কারণে পশ্চিমের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক কঠিন হবে৷ ‘তাই তালেবান এখন অন্য অঞ্চলের দেশগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে, কারণ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সহজ মনে হচ্ছে’- ডিডাব্লিউকে বলেন রুটিগ৷

আইসিজির প্রতিবেদন বলছে, সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে আদর্শিক মিল খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে না৷ এর পরিবর্তে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার মতো ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে৷

রুটিগ বলেন, মধ্য এশিয়ার দেশ থেকে শুরু করে চীন, ইরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো সন্ত্রাসবাদ দমন৷ সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান প্রভিন্স’ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় ঐ দেশগুলো তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি৷

আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়া কতটা কঠিন তা পাকিস্তানের দিকে তাকালে বোঝা যায়৷ দ্য ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন বলছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা অনেক বেড়েছে৷ ২০২৩ সালে হামলা বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ৷ এসব হামলায় প্রায় ৯৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷

তালেবান এখন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি৷ পাকিস্তানকে রাজনৈতিক চাপ দিতে তালেবান এমন করতে পারে৷ দ্য ডিপ্লোম্যাট মনে করছে, তালেবান নিষ্ক্রিয় থাকায় পাকিস্তান তার দেশে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ তবে এসবের মধ্যেও আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নতুন রুট খোলাসহ অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত টোমাস নিকলাসন তালেবানের আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছেন৷ কয়েক দশকের যুদ্ধের পর এটি ‘প্রয়োজন’ বলে মনে করছেন তিনি৷ ডিডাব্লিউ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.