বাল্টিক দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতের আশঙ্কা

শুধু ইউক্রেনের উপর প্রায় দুই বছর ধরে হামলা চালিয়ে রাশিয়া ক্ষান্ত হবে না, অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের দিকেও দেশটির কুনজর রয়েছে৷ বিশেষ করে বাল্টিক সাগর অঞ্চলে এমন সন্দেহ বেশ কিছুকাল ধরে দানা বাঁধছে৷ ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এস্টোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়েনিয়া রাশিয়ার পরবর্তী আগ্রাসনের শিকার হতে পারে, সেই আশঙ্কার নানা সংকেত দেখতে পাচ্ছে এই তিন দেশ৷

এবার এস্টোনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করলো, যে মস্কো পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতের প্রস্তুতি চালাচ্ছে৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী রাশিয়া সামরিক বাহিনীতে সংস্কার চালিয়ে সেই প্রস্তুতি শুরু করছে৷

এমন এক দিনে এস্টোনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশিত হলো, যে দিন রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ তিন বাল্টিক দেশের একাধিক নেতাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷ এস্টোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাইয়া কালাস ও রাষ্ট্রসচিব তাইমার পেটারকপ, লিথুয়েনিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রী সিমোনাস কাইরিস এবং লাটভিয়ার আগের সংসদের প্রায় ৬০ জন সদস্যের বিরুদ্ধে সোভিয়েত আমলের সৌধগুলি ধ্বংসের দায়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছে৷ অর্থাৎ সেই ব্যক্তিরা রাশিয়ায় প্রবেশ করলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে পারেন৷ রাশিয়ার আইন অনুযায়ী সেই অপরাধের জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ঐতিহাসিক স্মৃতি’ ধ্বংসের দায়ে কালাস-কে পুলিশ খুঁজছে৷ উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুরু হবার পক্ষ থেকে তিন বাল্টিক দেশে সোভিয়েত আমলের বেশিরভাগ সৌধ ধ্বংস করা হয়েছে৷ তিন দেশের সরকারই সেগুলিকে রাশিয়ার প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল৷

রাশিয়ার সিদ্ধান্তের পর কালাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ‘ক্রেমলিন এর মাধ্যমে আমার ও অন্যান্যদের মুখ বন্ধ করার আশা করছে বটে, কিন্তু তাতে লাভ হবে না৷ আমি ইউক্রেনের প্রতি শক্তিশালী সমর্থন চালিয়ে যাবো৷ ইউরোপের প্রতিরক্ষা বাড়ানোর পক্ষেও সওয়াল করে যাবো৷’

অ্যামেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে ন্যাটোর কিছু সদস্য দেশকে রক্ষা না করার যে হুমকি দিয়েছেন, সেই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে৷ এস্টোনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী রাশিয়ার পক্ষে অবিলম্বে ইউক্রেনের পাশাপাশি ইউরোপের অন্য কোনো দেশের উপর হামলার ক্ষমতা না থাকলেও আগামী এক দশকের মধ্যে সে রকম সংঘাতের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে মস্কো৷ সোভিয়েত আমলের সেনাবাহিনীর মতো ক্ষমতা অর্জন করতে সামরিক সংস্কার চালানো হচ্ছে বলে সেই গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করছে৷ ফলে ইউরোপের সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা শিল্পখাতকেও পালটা প্রস্তুতি শুরু করতে হবে বলে রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সম্প্রতি ইউরোপের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষমতা দ্রুত বাড়াতে যৌথ উদ্যোগের পক্ষে সওয়াল করছেন৷ বিশেষ করে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জামের উৎপাদন তরান্বিত করতে ইউরোপীয় স্তরে দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য চাপ দিচ্ছেন তিনি৷ ট্রাম্প সত্যি আবার অ্যামেরিকার প্রেসি়ডেন্ট হলে ইউরোপের প্রতিরক্ষার জন্য বাইরে থেকে প্রত্যাশিত সাহায্য না পেলে নিজস্ব শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করতে হবে বলে শলৎস মনে করছেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.