একতরফা নির্বাচনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হবে: বিশিষ্ট ৪০ নাগরিক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে এখনো বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি সমমনা দল আন্দোলনের মাঠে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শক্তি-সম্ভাবনা-ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হবে এবং সমাজে ক্ষোভ ও বিরোধ বৃদ্ধি পাবে বলে সতর্ক করেছেন ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক।

আজ রোববার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে—নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ৭ জানুয়ারি একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকার/নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই নির্বাচনের আগে আগে নির্বিচারে মামলা, গ্রেপ্তার, বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় সাজা প্রদান ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচন এমনকি রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন তাই হতে যাচ্ছে সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে কেবল তাদেরই ডামি প্রার্থী ও অনুগত দলগুলোর প্রার্থীদের নির্বাচন। ফলে এই নির্বাচনে পছন্দমতো যথার্থ বিকল্প বেছে নেওয়া থেকে বাংলাদেশের নাগরিকগণ বঞ্চিত হবেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অতীতের দুটো নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের ফলে সরকারের জবাবদিহি বিলীন হয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে এবং আইনের শাসন ও সুশাসন সুদূরপরাহত হয়ে পড়ে। আমরা তাই অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন/সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। এই লক্ষ্যে নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে সংবিধানের ১২৩ (৩) (খ) অনুচ্ছেদ অনুসারে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে এর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন, সমঝোতায় পৌঁছা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি/জামিন প্রদান এবং নতুন তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পাওয়া যাবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে একতরফা নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী দলের প্রতি দমননীতি অব্যাহত রাখলে সরকারের বৈধতার সংকট থেকেই যাবে, সমাজে ক্ষোভ ও বিরোধ বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শক্তি, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হবে বলে বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাগণ হলেন—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক সচিব সৈয়দ ড. মারগুব মোর্শেদ, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবিএম সিরাজুল ইসলাম, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, লেখক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক ড. সি আর আবরার।

অধ্যাপক ও গবেষক ড. স্বপন আদনান, প্রকৌশলী বিডি রহমতুল্লাহ, ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, সাংবাদিক কামাল আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল, ব্যবসায়ী আব্দুল হক, আইনজীবী তবারক হোসেন, মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক, অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক নায়লা জামান খান, অধ্যাপক ও গবেষক ড. মোবাশ্বের হাসান, মানবাধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, অ্যাকটিভিস্ট ও শিক্ষক এআর রাজী, লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এবং মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রোজিনা বেগম।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.