“৯ থেকে ৫ টার বাহিরে টেকসই পেশা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ইনস্টিটিউট অফ কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ’র (আইসিএমএবি) “৯ থেকে ৫ টার বাহিরে টেকসই পেশা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) রুহুল কুদ্দুস অডিটোরিয়ামে  সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের সচিব মোঃ শামসুল আরেফিন। অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং কনসালটেন্ট, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, SOLVVD মেরিলিন ফারজানা আহমেদ এবং অ্যাকাউন্টিং বিজ এলএলসি, ওয়াইমিং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’র প্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ শামসুর রহমান, সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মেরিলিন ফারজানা আহমেদ তার  আলোচনায় জানান যে, চাকুরির জন্য অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে যার মাধ্যমে, যে কেউ অনলাইনে চাকরি পেতে পারেন এবং ফুল-টাইম বা পার্ট-টাইম কাজও পেতে পারেন। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্থার চাকুরি এমনকি ঘণ্টাভিত্তিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চাকুরি করা যায়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে, বৈচিত্র্যময় পরিবেশে বেশ কিছু চাকুরির সুযোগ রয়েছে। সুতরাং, যে কোন CMA ফরচুন ৫০০ কোম্পানিতেও CFO হিসাবে পূর্ণ-সময়ের জন্য চাকুরি পেতে পারেন। অ্যাকাউন্টিং ব্যাকগ্রাউন্ড কর্মজীবী পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ পেতে পারেন এবং পরামর্শক হিসেবে পরিষেবা বিক্রয় করতে পারেন। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যে কেউ নিজের ইচ্ছা বা আবেগকে অনুসরণ করতে পারেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রথাগত উপার্জন ব্যবস্থা থেকে উচ্চতর উপার্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ  প্ল্যাটফর্মে স্বউদ্দোগে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারা যায়, কারণ এখানে একজনকে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস, বিভিন্ন পেশাজীবীরসাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়।  পেশাজীবীরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন দক্ষতা এবং মূল্যবান অভিজ্ঞতা শিখে এবং এখানে কেউ নিজের পছন্দ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পেতে পারেন। তিনি তার আলোচনায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কিছু ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন- অসামঞ্জস্যপূর্ণ আয়, স্ব-কর্মসংস্থান কর, ক্লায়েন্ট এবং প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্য সুবিধা, পেনশন পরিকল্পনা ইত্যাদির মতো অন্যান্য সুবিধার অভাব, বিচ্ছিন্নতা এবং কর্মজীবনে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১০,৫০,০০০ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তারা বার্ষিক ১৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি উপার্জন করে। সরকার এ খাত হতে আয় করমুক্ত ঘোষণা করেছে এবং রেমিট্যান্স হিসেবে আয়ের উপর ৪% প্রণোদনা দিচ্ছে।

মোঃ শামসুর রহমান তার আলোচনায় জানান যে, মিসেস ফারজানা যে ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেছেন তা আসলে পেশাদার অ্যাকাউন্টেন্টদের জন্য বিশেষ সুযোগ। তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে সফল অ্যাকাউন্টিং ফ্রিল্যান্সার হতে পারা যায়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে হিসাব নিকাশ প্রয়োজন, তাই কেউ যদি কোন প্রতিষ্ঠানের সুনজরে চলে আসতে পারেন, সে নিজে থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠান না ছেড়ে দিলে প্রতিষ্ঠান তাকে ছাড়বে না। তাই এখানে চাকরি হারানোর ভয় নেই। তিনি বলেন, ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট্যান্টরা উদ্যোক্তা হতে পারেন এবং নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে একজনকে স্মার্টভাবে এবং দ্রুততারসাথে ক্লায়েন্টদেরসাথে যোগাযোগ রাখা  উচিত। শিল্পের গতি প্রকৃতি এবং নিয়মাবলীর সাথে আপ টু ডেট থাকতে হবে, ক্রমাগত নতুন অ্যাকাউন্টিং সফ্টওয়ার এবং দক্ষতা শিখতে হবে। পেশার বিকাশে সুযোগ সন্ধান করতে হবে। অ্যাকাউন্টিং ফ্রিল্যান্সাররা ক্লায়েন্টের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের সচিব মোঃ শামসুল আরেফিন  তাঁর বক্তব্যে বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিশ্বব্যাপী একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে এবং কোভিডের সময়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম  অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে।  তিনি আরো বলেন যে, আগামী দিনে AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এর চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং আশংকা করা হচ্ছে যে, যাদের দক্ষতা কম তাদের অনেকে চাকুরি হারাবে। সুতরাং, পেশাদার হিসাবরক্ষকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং তাদের বাজার উপযোগী দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তিনি আরো ব্যক্ত করেন যে, তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকা উচিত কারণ যারা আইটি-তে আপ-টু-ডেট থাকবে ভবিষ্যতে তারাই বিশ্ব শাসন করবে।

আইসিএমএবি’র সভাপতি আবদুর রহমান খান এফসিএমএ আলোচনা সেশনের সারসংক্ষেপ সভায় তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন যে, এ অধিবেশনটি একটি সূচনা অধিবেশন মাত্র। এর সব সুযোগ সম্পর্কে কথা বলার জন্য এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জানার জন্য এবং বাজার দখলের জন্য আমাদের কঠোরভাবে কাজ করা উচিত। তিনি আরও যোগ করেন যে একজন পেশাদার হওয়ায় তিনি সদস্যদের উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চান।

তিনি আরও বলেন, আইসিএমএবিতে প্রায় ১৮০০ সদস্য এবং প্রায় ২৫০০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। যদি সকলে সঠিকভাবে কাজ করেন, তবে আমরা বিপুল সংখ্যক জনশক্তিকে কাজে লাগাতে পারব। পেশাদার হিসাবরক্ষকরা কখনও অবসর নেবেন না এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম পেশাদার হিসাবরক্ষকদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ হবে।

অনুষ্ঠানে আইসিএমএবি’র প্রাক্তন সভাপতি এবং সেমিনার ও সম্মেলন কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম এফসিএমএ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। আইসিএমএবি’র কাউন্সিল সদস্য এবং টেকসই ক্যারিয়ারের জন্য উদ্ভাবন কমিটির  চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এফসিএমএ অধিবেশনটি সঞ্চালনের পাশাপাশি  বিচক্ষণতার সাথে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

সরাসরি এবং ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক আইসিএমএবি’র সদস্য এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.