ওষধশিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্যাটেন্ট আইন সংশোধনের আহ্বান

স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় ওষুধশিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্যাটেন্ট আইন ২০২২ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে উক্ত সংশোধন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি খাত নিবিড়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ করার ওপর তাঁরা গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

বুধবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেছেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্যে তারা এ কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজ্ জাকিয়া সুলতানা, বিল্ডের চেয়ারপার্সন মিজ্ নিহাদ কবির এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর প্রেসিডেন্ট জনাব রিজওয়ান রাহমান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান। বাংলাদেশের ওষুধশিল্প সাম্প্রতিক দশকগুলোতে প্রভূত অগ্রগতি সাধন করেছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের ওষুধ জায়গা করে নিয়েছে। একটি কার্যকরী রোডম্যাপ প্রস্তুত করে তার সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি বলে বক্তাগণ মনে করেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, স্থানীয় ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্যাটেন্ট আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও টিআরআইপিএস চুক্তির আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধাসমূহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় প্রয়োজনীয় প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। অবিলম্বে এপিআই পার্কে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করার উপর জোর দিতে হবে। ওধুধ শিল্পে ভবিষ্যতে আরও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে এবং এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ শিল্পের আরও উন্নয়ন করা সম্ভব। একইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত ওষুধ পণ্যের প্যাটেন্টের আবেদন জমা দেওয়ার জন্য গত ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মেইলবক্সের ব্যবস্থাটি পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তিনি বিলোপের আহ্বান জানান।

এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ের জন্য ওষুধ শিল্পকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে সরকারি খাত, বেসরকারি খাত এবং শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি শক্তিশালী অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন ইআরডি সচিব শরিফা খান।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাত বিশেষত ওষুধ শিল্পের সঙ্গে নিবিড় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই প্যাটেন্ট আইন সংশোধন করা হবে।

বাংলাদেশের প্যাটেন্ট আইনে প্যাটেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রাহমান বলেন, জৈব প্রযুক্তিগত গবেষণার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে দেশে বায়োটেক পার্ক ও জেনোম ভ্যালি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। ওষুধ শিল্পে পোশাক খাতের ন্যায় প্রণোদনা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মুক্তাদির বলেন , স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পরেও ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত TRIPS চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাসমূহ যাতে অব্যাহত রাখা যায় সে ব্যাপারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাথে প্রয়োজনীয় আলাপ আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া আসন্ন সময়ে ঔষধশিল্প খাতের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষিত দক্ষ জনবল তৈরির উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় আলাদাভাবে বাংলাদেশের জন্য দেশভিত্তিক TRIPS WAIVER এর জন্য আবেদন করতে পারে।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি-র প্রকল্প পরিচালক জনাব ফরিদ আজিজ । এছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপনমূলক বক্তব্য প্রদান করেন বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ্ ফেরদৌস আরা বেগম। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ, দেশের প্রধান প্রধান ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সরকারি, বেসরকারি খাত ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ উক্ত সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.