‘অর্থনৈতিক অবিচারের শিকার দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা’

ব্যাহত হবে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন

গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার বা পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতি সংকটে রয়েছে। তবে এ মুহূর্তের সংকট শুধু সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা নয়। অর্থনীতিতে একটা অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। যার শিকার হচ্ছে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। এর ফলে ব্যাহত হবে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন।

রোববার (২৪ জুলাই) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সামষ্টিক অর্থনীতি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, বহি খাত নিয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ম তামিম, ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে তিনটি অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, নতুন দারিদ্র্য; দ্বিতীয়ত, পুষ্টি ও মাধ্যমিক শিক্ষাসহ কিছু সূচকে নিম্নমুখিতা এবং তৃতীয়ত, যুব বেকারত্ব বৃদ্ধি।

তিনি বলেন, কোভিড মহামারির পর দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হলেও তিন কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে ২১ লাখ লোক দরিদ্র হয়েছে। নতুন এই দারিদ্র্য অবিচারের একটা দিক বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, দেশ কিছু উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে পড়েছে। যেমন, পুষ্টিতে আমরা ভালো করছিলাম। এখন পুষ্টিহীনতা বাড়ছে। মাধ্যমিক শিক্ষায় ড্রপ আউট বেড়েছে।

এগুলো অবিচারের দ্বিতীয় চেহারা। যে ধরনের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে আমরা এগোচ্ছি তাতে যুব বেকারত্ব বাড়ছে। এসব কারণে কোভিডের পর অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট কিছু অবিচারের চেহারা দেখা যাচ্ছে। এই তিনটি মিলে অর্থনীতিতে অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হবে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় এখন লোহ ত্রিভূজ গেড়ে বসেছে। প্রথমত, আমাদের উন্নয়ন-দর্শন এখন একমাত্রিক দর্শনে আটকে গেছে। দ্বিতীয়ত, অর্থনীতি এখন স্বার্থের দ্বন্দ্ব-নির্ভর। প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়মই নিয়ম হয়েছে। ফলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এখন হার্ট অফ ইকনোমি বা অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

প্রশ্ন তুলে হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুরু হয়েছিল স্বল্প সময়ের জন্য। তাহলে এখন কেন সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে? এর কোনো অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা নেই। তাহলে কার স্বার্থে এ সুবিধা? এখানে কনফ্লিকট অফ ইন্টারেস্ট কাজ করেছে।

‘ট্রান্সপোর্ট সেক্টর বা পরিবহন খাতও স্বার্থের দ্বন্দ্ব-নির্ভর হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি, ব্যাংক খাত, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও তাদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে।

‘একটা সময়ে আমরা দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তা বা রিজেলিয়ান্স নিয়ে গর্ব করতাম। এখন এটাকে বিদায় দেয়ার সময় এসেছে। কারণ এমন একটা সময় এসেছে যখন সব সুখ সুবিধাবাদীরা ভোগ করছে। অবিচারের শিকার এখন দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.