আমাদের যেমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, উন্নত দেশগুলোতে বেড়েছে: প্রধানমন্ত্রী

আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার ফল সবাই ভোগ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে যেমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ঠিক তেমনিভাবে উন্নত দেশগুলোতে অনেক অনেক মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিরোধীদল সমালোচনা করলেও হতাশ হওয়া যাবে না। তবে এতে যদি ঘাটতির কোনও তথ্য থাকে সরকার সেটা গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।

শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে ২৭ জন সরকারি কর্মকর্তা, তিনটি মন্ত্রণালয় ও একটি ইউনিটের কাছে এ পদক তুলে দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে—ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়। জনগণের সেবা করাটাই আমাদের কাজ। আমরা কতটুকু দেশের জন্য করতে পারলাম, দেশের মানুষকে দিতে পারলাম সেটাই দেখার বিষয়। চেষ্টা করেছি যে, আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাটা এমনভাবে গড়ে উঠুক, যেটা গণমুখী হবে, জনসেবার হবে, জনগণের জন্য কাজ করবে। একটা রাষ্ট্রকে যদি উন্নত করতে হয়, তাহলে সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য স্থির করতে হয়।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের কাছে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে দেশের সবার প্রতি একই আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের প্রতিটি মানুষকে যার যার জায়গা থেকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা উন্নত বিশ্ব এ পরিস্থিতিতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই সবাইকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সবাই মিলে একযোগে কাজ করলে আমরা সংকট এড়িয়ে এগিয়ে যাব।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি এ ক্ষেত্রে পত্র-পত্রিকা নানা কথা লিখবে। টকশোতে অনেক কথা বলবে। বিরোধী দলও কথা বলবে। এটা বলাই তাদের কর্তব্য। তারা বলে যাক। আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। যে আমরা সঠিক পথে আছি কিনা, সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করছি কিনা, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিনা, দেশের গ্রামের সাধারণ মানুষ সঠিক সেবা পাচ্ছে কিনা? আমরা যদি সেইভাবে চিন্তা করি, তাহলে কে কি বলছে, সেই দিকে খুব বেশি একটা নজর দিতে হবে না। কে কী বললো সেটা শুনে হয়তো দেখতে পারি কোথাও আমাদের কোন ঘাটতি আছে কিনা। ওইটুকু আমরা নেব। কিন্তু ওই কথায় যেন বিভ্রান্ত না হন, কেউ যেন হতাশা না হন। এইটুকু বলবো। কেউ হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়েন সেই দিকে সচেতন হতে হবে। হতাশা হওয়ার মতো কিছু নেই। যখন যে অবস্থা হবে, সেই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। তারপরও আমাদের নিজেদের যা কিছু আছে, তা নিয়ে চলবো।’

দেশের মানবসম্পদ ও মাটি কাজে লাগাতে পারলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান সরকার প্রধান। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের অর্জিত অর্থ দিয়ে সকলের বেতন-ভাতা, আরাম, আয়েশ সবকিছু। তাই কাজ করতে হবে তাদের জন্য, তাদের স্বার্থে এবং কল্যাণে।’

প্রশাসনের কর্মকর্তারা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, ফ্ল্যাট, জমি ও গাড়ি সুবিধাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সংসারের চিন্তা অনেকটা লাঘব করে দিয়ে জনগণের চিন্তা যাতে করতে পারেন, সেই সুযোগটা যাতে সৃষ্টি হয়, সেই ব্যবস্থাও আমি নিয়েছি। বিস্তারিত এই ব্যাপারে বলতে চাই না। যাদের দিয়ে জনগণের দায়িত্ব পালন করাব, তারা যেন মন-প্রাণ ঢেলে জনগণের সেবা করতে পারে। সেইভাবে কাজ করেছি।’ প্রত্যেকটা কাজের জবাবদিহি নিশ্চিতে কর্মসম্পাদন চুক্তি করার হচ্ছে হয়েছে বলেও জানান সরকার প্রধান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘খাদ্যের জন্য হাহাকার, এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও হাহাকার দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ, মহামারি এবং যুদ্ধ চলছে। এ কারণে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। একে তো করোনা মহামারি, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপরে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা চলছে, ইউরোপ দাবদাহে পুড়ছে, বন পুড়ে যাচ্ছে, বিমানবন্দরের পিচ গলে যাচ্ছে। এককথায় বিশ্বব্যাপী সংকট শুরু হয়েছে। কাজেই আমাদের এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।’

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.