নানা উদ্যোগেও কাটছে না ডলার সংকট

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও ডলারের সংকট কাটছে না। অনেক ব্যাংক এখন পণ্য আমদানি এবং রেমিট্যান্স আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম নিচ্ছে একশ টাকার বেশি। ফলে সংকট কমার পরিবর্তে যেন আরও বেড়েই চলেছে।

জানা গেছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে মে অস্থিরতা বিরাজ করছে তারই প্রভাব পড়ছে দেশে। ফলে জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে সার্বিকভাবে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। আবার রপ্তানি বাড়লেও তা আমদানির তুলনায় অনেক কম। আবার প্রবাসী আয়ও খুব বেশি বাড়ছে না। ফলে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে বেড়ে গেছে প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রাটির দাম। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি ডলারের দাম ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা হলেও প্রবাসী আয় ও পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানিতে ১০২ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। আর কোনো কোনো ব্যাংক ডলারপ্রতি ১০১ টাকা দিয়েও প্রবাসী আয় পাচ্ছে না

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনেক রপ্তানিকারক তাঁদের রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটায় (ইআরকিউ) রাখা বিদেশি মুদ্রা বিক্রি করছেন। ব্যাংকগুলো এই ডলার কিনে আমদানি দায় শোধ করছে। একইভাবে অনেক ব্যাংক নিজেদের কাছে রাখা ডলারও বিক্রি করছে। এরপরও সংকট কাটছে না।

এদিকে ডলার-সংকট মেটাতে সরকারি আমদানি দায় পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রতি ডলারের দাম ধরা হয়েছে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা।

প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভের উপর চাপ বাড়ছে। ফলে রিজার্ভ কমে এখন চার হাজার কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এছাড়া বেতন-বোনাস দিতে রপ্তানিকারকেরা ঈদের আগেই বিল নগদায়ন করে ফেলেছেন। এই কারণে বিদেশি মুদ্রায় তেমন আয় নেই। অন্যদিকে আমদানি থেমে নেই। ফলে নানা উদ্যোগের পরও সংকট কাটছে না।

ডলার-সংকট নিরসনে গত বৃহস্পতিবার একসঙ্গে চারটি সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেগুলো হলো ব্যাংকের ডলার ধারণের সীমা (এনওপি) হ্রাস, রপ্তানিকারকের প্রত্যাবাসন কোটায় (ইআরকিউ) ধারণকৃত ডলারের ৫০ শতাংশ নগদায়ন, ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখার সীমা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে স্থানান্তর। এছাড়া ৫০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের বেসরকারি যে কোনো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে সংকট কিছুটা কমার আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এর আগে, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণ বন্ধ করা হয়। দামি গাড়ি, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী, পানীয়সহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যাংকঋণ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের ফলে আমদানি খরচ কিছুটা কমবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.