নাভানা ফার্মার শেয়ারের বিডিং ২ সেকেন্ডেই শেষ!

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) পুঁজিবাজারে আসার প্রক্রিয়ায় থাকা নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস (Cut-off price) নির্ধারণে নিলাম (Bidding) মাত্র দুই সেকেন্ডেই শেষ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমে অংশ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত শেয়ার কেনার জন্য দর প্রস্তাব করেছে। এতে ৩৪ টাকা কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ হয়েছে।

তবে মুহূর্তের মধ্যে বিডিং শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। কারণ অনেকেই সময়মত প্রস্তাব জমা দিতে পারেনি। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওতে বিডিংয়ের জন্য সংশোধিত বিধির কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। বিডিংয়ে কারসাজির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিধি সংশোধন করে সর্বোচ্চ দর প্রস্তাবের সীমা বেঁধে দিয়েছে।

এই বিধির কারণে এর আগে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিটের নিলামেও একই ঘটনা ঘটেছিল। তখন মাত্র সাড়ে পাঁচ সেকেন্ডে শেষ হয়ে গিয়েছিল ওই বিডিং। তখনো অনেক প্রতিষ্ঠান সময়মত প্রস্তাব জমা দিতে পারেনি। যদিও ঘোষণা অনুসারে, ৪ দিন সময় ছিল দরপ্রস্তাব জমা দেওয়ার। বিষয়টি বুকবিল্ডিং পদ্ধতির স্পিরিটকে ব্যাহত করেছে বলে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) বিধিটি সংশোধন করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য দর প্রস্তাবের উন্মুক্ত সুযোগ রাখার জন্য বিএসইকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বিধিমালায় কোনো পরিবর্তন না এনে বিদ্যমান বিধির আলোকেই নাভানা ফার্মার বিডিংয়ের অনুমতি দেওয়ায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

বর্তমান বিধির কারণে নির্ধারিত সীমার বেশি দর প্রস্তাব করা যায় না বলে তাতে সংশ্লিষ্ট শেয়ারের উপযুক্ত মূল্য (Fair Price) নির্ধারিত হয় না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বিষয়টি নিয়ে ভালো কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের মধ্যেও হতাশা আছে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসার জন্য গত দুই বছরে রোড শো করেছে যেসব কোম্পানি, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আপাতত আইপিওতে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে এই বিধির কারণে নাভানা কর্তৃপক্ষের মধ্যেও হতাশা রয়েছে। বিডিং শুরুর বেশ কিছুদিন আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাভানা ফার্মার একজন কর্মকর্তা অর্থসূচককে বলেছিলেন, ‘আমাদের কোম্পানির যে মৌলভিত্তি, প্রবৃদ্ধির হার ও সম্ভাবনা আছে, বিদ্যমান বিধির আওতায় বিডিংয়ে তার প্রতিফলন ঘটবে না।’ তিনি আরও বলেন, উন্মুক্ত বিডিংয়ের সুযোগ থাকলে আমাদের কোম্পানির শেয়ারের মূল্য যদি ১৫ টাকাও নির্ধারিত হতো, তবু দুঃখ থাকতো না। আমরা মনে করতাম, বাজার এটিকেই যৌক্তিক মূল্য মনে করছে। কিন্তু বিদ্যমান বিধির আওতায় যে বিডিং হবে, তাতে আমাদের কোম্পানির শেয়ারের প্রকৃত ফেয়ার মূল্য কত তা আমরা জানতে পারবো না।’

বিডিংয়ের এই সীমাবদ্ধতার পরও আপনারা বাজারে আসছেন কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি অর্থসূচককে বলেছিলেন, বাজারের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা আইপিওতে আসছি। আমরা কিছুটা বঞ্চিত হলেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা যাতে এই কোম্পানির মালিকানায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়-সে বিবেচনাকে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। কিন্তু অনেক উদ্যোক্তা-ই এমন বিবেচনা না করতে পারেন। কারণ কোনো কোম্পানি গঠনের পর সেটিকে একটি ভাল অবস্থানে নিয়ে আসতে হলে অনেক শ্রম-ঘাম ঝরাতে হয়, অনেক ঝুঁকি নিতে হয়। এরপর যদি শেয়ারের উপযুক্ত দাম না পাওয়া যায় তাহলে সেটি উদ্যোক্তাদের জন্য হতাশার বিষয়ে পরিণত হয়।

আইন অনুসারে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওতে মোট ইস্যুতব্য শেয়ারের নির্ধারিত অংশ প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিডিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি করতে হয়। এতে যে দামে শেয়ার বিক্রি শেষ হয়, ওই দামের (কাট-অফ প্রাইস) উপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে তা আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির প্রস্তাব করতে হবে।

বিএসইসির অনুমোদনের প্রেক্ষিতে, গত ৪ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সময় বিডিংয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়। নিলামে ২৮১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। এতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম উঠে ৩৪ টাকা। আর সর্বনিম্ন দাম প্রস্তাব করা হয় ২০ টাকা। কিন্তু চার দিন সময় থাকলেও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু জানত, ৩৪ টাকার বেশি দাম প্রস্তাব করা যাবে না, তাই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান হুড়োহুড়ি করে এই দামে প্রস্তাব জমা দেওয়ার চেষ্টা করে ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমে। তাতে ২ সেকেন্ডেই নির্ধারিত অংকের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ প্রস্তাব জমা পড়ে যায়। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান সুযোগই পায়নি সঠিক সময়ে দর প্রস্তাব জমা দেওয়ার।

গত ১ জুলাই, ২০২১ থেকে ৩১ মার্চ, ২০২২ তারিখ পর্যন্ত নয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২ টাকা ৩৯ পয়সা। গত ৫ বছরে কর পরবর্তী মুনাফার ভারিত গড় হারে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৫১ টাকা।

গত ৩১ মার্চ, ২০২২ তারিখে পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৯ টাকা ০২ পয়সা। আর পুনর্মূল্যায়ন পরবর্তী মূল্য ছিল ৪৩ টাকা ৫৩ পয়সা।
আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএসইসির দেওয়া শর্ত, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না।

কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে  এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.