আবার বেড়েছে ডলারের দাম

মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম। আর দুর্বল হয়েছে দেশীয় মুদ্রা টাকা। ডলারের দাম আরও ৫০ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বুধবার (১৩ জুলাই) প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা, যা গতকাল পর্যন্ত ছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম অর্থসূচককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণ করছে না। ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার লেনদেন করে, তার মধ্যে একটি দর বিবেচনায় নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ ৯৩ টাকা ৯৫ পয়াসাকে বিবেচনায় নিয়েছে। এ দামেই ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে, গত ২৮ জুন ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা।

ডলারের দাম বাজারে ছেড়ে দেয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিনিয়তই ডলারের দাম বাড়ছে। তবে সেটা খুব সামান্য পরিমাণে। সব মিলিয়ে গত দুই মাসে ডলারের দাম বেড়েছে ৭ টাকার বেশি।

সরকারি আমদানি বিল মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। এই দরে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ডলারের বিপরীতে টাকার হিসাব করে থাকে। এটাকে বলা হয় আন্তঃব্যাংক রেট।

ডলারের দাম বাড়ায় একদিকে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে, আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা নির্ধারণ করলেও ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দরে। অনেক ব্যাংক বাড়তি দামেই প্রবাসী আয় সংগ্রহ করছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে। এতে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯৮ থেকে ১০০ টাকায়।

অস্থির ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের চাহিদা বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে দাম বাড়াচ্ছে। সেইসাথে রিজার্ভ থেকেও প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডলারের বাজার। এই অবস্থায় ডলারের দাম বাজারের উপর অর্থাৎ চাহিদা-যোগানের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

ব্যাংকাররা বলছেন, চাহিদা বাড়ায় ডলারের দাম বাড়ছে। অনেক বিদেশি ব্যাংক ডলার ৯৫/৯৬ টাকায় কিনছে। এখন দর ঠিক রাখতে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেটে কেনােবচা করছে না অধিকাংশ ব্যাংক। ফলে মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বাড়ছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ডলারের দাম বাজারের ওপর নির্ভর করে। আমাদেরও সেদিকেই যাওয়া উচিত।

তাদের মতে, ডলার নিয়ে দেশের মুদ্রাবাজারে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিগগিরই এ সংকট কমার কোনো লক্ষণ নেই। এ সংকটের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থায় নগদ টাকারও সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে চলতি হিসাবে লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, গত ০২ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়, বাজারের সে সঙ্গতি রেখে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। তবে হঠাৎ যেন ডলারের দাম বেশি বাড়িয়ে না ফেলা হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। পাশাপাশি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো যাতে দাম বেশি বাড়াতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.