পরিচালন মুনাফা বেড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকের

করোনার প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। চলতি ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

২০২১ সালের তুলনায় চলতি বছরে একই সময় কোনো কোনো ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মুনাফার এমন উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে আমদানি বাণিজ্য, ব্যাংক ঋণের সুদ, কমিশন ও মাশুল আদায় এবং শেয়ারবাজারের মুনাফা। আলোচ্য সময়ে এসব ব্যবসা থেকে ভালো আয় করেছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া, বিভিন্ন ছাড়ের কারণে অন্যদায়ী অনেক ঋণ নিয়মিত দেখাতে পারছে ব্যাংকগুলো। এতেই মুনাফা বেড়েছে।

এর আগে, ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা ও করোনার আঘাতে ২০২০ সালে পরিচালন মুনাফায় ধস নেমেছিল দেশের ব্যাংক খাতে। তবে ২০২১ সালে ব্যাংকগুলোর আয় খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যা অব্যাহত আছে ২০২২ সালেও।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর আয়ের বড় অংশ আসে ঋণের সুদ থেকে। তবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে আয় দেখাতে পারে না ব্যাংক। করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে ঋণ আদায় না করেও আয় দেখাতে পারছে ব্যাংকগুলো। করোনার কারণে ২০২০ সালে কেউ এক টাকা না দিলেও তাকে খেলাপি করা হয়নি। ২০২১ সালে যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, এর ১৫ শতাংশ দিলেই নিয়মিত দেখানো হয়। আর চলতি বছর একই সুবিধা দেয়া হলেও এবার কিছু শর্ত রোগ করা হয়েছে। যেমন, বড় ঋণের ক্ষেত্রে জুনে ৫০. সেপ্টেম্বরে ৬০ ও ডিসেম্বরে ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি হবে না। সিএমএসএমই ও কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২৫, ৩০ ও ৪০ শতাংশ পরিশোধ করলে কোন গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া এমন সুযোগও ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়ার অন্যতম কারণ।

ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে পূবালী ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ৬৫০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫০৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া, আলোচ্য সময়ে ব্যাংক এশিয়ার পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৭৪ কোটি টাকা।মা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৮৪ কোটি। সাউথইস্ট ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৫৩৪ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৭২ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়ে ৪৮৯ কোটি টাকা হয়েছে, মা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৩ কোটি টাকা। এসময় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৬০ কোটি টাকা।যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩১০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ ৩৯৫ কোটি, যা আগের বছরে ছিল ৩৫৮ কোটি। আলোচ্য সময়ে ঢাকা ব্যাংক ৩৭৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। আগের বছরে যা ছিল ৩০৯ কোটি। এই সময়ে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৭৭ কোটি, আগের বছর যা ছিল ৩২৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৭৫ কোটি। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৫০ কোটি। ঢাকা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩০৯ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১৬৫ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ কোটি টাকা বেশি। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক ২০২২ সালের প্রথম ষাণ্মাসিকে (জানুয়ারি-জুন) ১০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, এর আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকের মুনাফা ছিল ৮০ কোটি টাকা। সে হিসেবে ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ২০ কোটি টাকা বা ২৫ শতাংশ।
এসময়ে কেবলমাত্র মধুমতি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে। ৮৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। আগের বছরে যা ছিল ১২৮ কোটি।

জানা গেছে, দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। প্রান্তিক (তিন মাস) ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো তাদের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জমা দেয়। এর আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে হয়। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সেই তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেওয়ার আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য জানাতে পারবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফাসংক্রান্ত অনানুষ্ঠানিক যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা ওই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও করপোরেট কর বাদ দেওয়ার পরই প্রকৃত মুনাফার হিসাব পাওয়া যাবে।

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.