মেলায় সাড়ে ৫২ কোটি টাকার বই বিক্রি

অমর একুশে বইমেলায় এবার ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলার সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল উদ্দিন আহমেদ। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ১৭ গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) মেলার শেষ দিন সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সমাপনী অনুষ্ঠানে বইমেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ তার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেন।

জালাল আহমেদ বলেন, ‘এবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। মেলায় সর্বমোট বই বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাংলা একাডেমি মেলার শেষ দিকে এসে একটা জরিপ পরিচালনা করে থাকে। সেই জরিপের ভিত্তিতে সর্বমোট বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়। এই সংখ্যাটা নিশ্চিত না হলেও মোটামুটি একটি অঙ্ক আমরা দাঁড় করাতে পারি। তবে বিক্রির সংখ্যাটা এর চেয়ে কম নয়, বেশিই হবে।’

নতুন বইয়ের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বইমেলায় এবার ৩ হাজার ৪১৬টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯০৯টি বই মানসম্মত। আমরা প্রতি বছর বাংলা একাডেমি থেকে একটি কমিটির মাধ্যমে কতটি বই মানসম্মত হয়, সেটি নির্ধারণ করে থাকি। ২০২০ সালে ৪ হাজার ৯১৯টি বই প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বছর মানসম্মত বই ছিল ৭৫১টি, শতকরা ১৫ শতাংশ ছিল মানসম্মত। এবার মোট প্রকাশিত বইয়ের ২৬ শতাংশ মানসম্মত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের তুলনায় এবার ভালো মানসম্মত বই প্রকাশিত হয়েছে।’

শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২২’-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসিম কুমার দে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

এবারের বইমেলার বিক্রি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও ৫০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলা হচ্ছে, কিন্তু আমার ধারণা— শতকোটি টাকার মতো বই বিক্রি হতে পারে। বেশি বললে হয়তো আয়কর বিভাগ এসে ধরে কিনা, সে ভয়ে তারা (প্রকাশকরা) কমিয়ে বলছেন। শুধু প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এবারের বইমেলা আয়োজন সম্ভব হয়েছে। আমার পক্ষে এটি আয়োজন সম্ভব ছিল না।’

সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বইমেলা বাংলা একাডেমির একটি অসাধারণ দিগন্ত। বইমেলা জাতির প্রাণকে আলোকিত করে। প্রজন্মকে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। সবকিছু মিলিয়ে বইমেলা বাঙালির জীবনে একটি অসাধারণ দিক। এই অসাধারণ দিককে ধারণ করে জাতি গঠনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে এটি আমাদের সকলের বিশ্বাসের জায়গা। বইমেলাকে আমরা দিগন্ত বিদারী বিস্তার মনে করি। আমি অনেক জায়গায় বইমেলায় গিয়েছি এবং সবজায়গায় গিয়ে আমার মনে হয়েছে, বইয়ের কোনও সীমান্ত নেই, বই সীমান্ত অতিক্রম করে সব জায়গায় পৌঁছে যায়। আমরা বইমেলার সবটুকু ধারণ করে বাংলাদেশ, বাঙালি জাতিসত্তার অগ্রমানতা রক্ষা করবো।’

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে সাত লাখ বর্গফুট জায়গায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় মোট ৩৫টি প্যাভিলিয়নসহ একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট- মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এবারের মেলায়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে করোনা মহামারির টালমাটাল অবস্থায় বইমেলায় বিক্রি হয়েছিল মাত্র তিন কোটি ১১ লাখ টাকা। তার আগের বছর ২০২০ সালে বইমেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.