বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতি

বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরে টানা পাঁচ মাস ধরেই বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এর আগের মাস অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্থীতি বেড়েছে দশমিক ২৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি বেড়েছে। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য বেশি।

আজ রোববার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যালোচনায় পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরে চাল, আটা-ময়দা, চিনি, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ, সবজিসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দামই বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ অতিসংক্রামক ওমিক্রণের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মূল্যস্ফীতিও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছিল। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছিল, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। তারই লক্ষণ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় খাতেই অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি বেড়েছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে বেশি বেড়েছে; নভেম্বরে এই হার ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশে উঠেছে। চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এর অর্থ হলো, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২১ সালের নভেম্বরে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৯৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগস্টে হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জুলাইয়ে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে। অর্থাৎ বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে খানিকটা বেশি ছিল গড় মূল্যস্ফীতি।

বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নভেম্বরে শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে। নভেম্বর মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে ৬ দশমিক ২০ শতাংশে উঠেছে। অক্টোবরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

নভেম্বরে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অক্টোবরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। নভেম্বর মাসে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অক্টোবরে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস