দেশে নতুন দরিদ্র সোয়া ৩ কোটি

কোভিডের অভিঘাতে আয় হ্রাসের কারণে দেশের অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন। চলতি বছরের আগস্টে জাতীয় পর্যায়ে নতুন এই দারিদ্র্যের অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ বা প্রায় তিন কোটি ২২ লাখ।

শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) জরিপের চতুর্থ ধাপে এ চিত্র উঠে এসেছে। এর আগের ধাপের জরিপগুলো যথাক্রমে ২০২০ সালের এপ্রিল, জুন ও চলতি বছরের মার্চে করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে এ জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের জুনে দেশে নতুন দরিদ্রের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে তা নেমে আসে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে। অর্থাৎ দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় সরকার আবারও যে বিধিনিষেধ আরোপ করে, তাতে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে। তবে জরিপে দেশের সামগ্রিক দারিদ্র্য নিয়ে কিছু বলা হয়নি। কোভিডের অভিঘাতে গত দেড় বছরে শ্রমজীবী মানুষের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ সময়ে তাঁদের আয় কমেছে। স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য ব্যয় কমাতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা, যার প্রভাব পড়ছে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ওপর।

চলতি বছরের আগস্টে শহরের বস্তি এলাকা ও গ্রামের ৪ হাজার ৮৭২ পরিবারের ওপর পরিচালিত এ জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সরকার এ বছর যে বিধিনিষেধ আরোপ করে, তাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

এতে দেখা গেছে, এ বছরের মার্চের তুলনায় শহরের বস্তিবাসী ও গ্রামবাসীর আয় যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। অর্থাৎ শহরের শ্রমজীবীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে প্রথমে জীবনের কথাই আসে, সে জন্য ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিধিনিষেধ আরোপ করা অপরিহার্য হলেও জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই বলেছেন, এতে তাঁদের জীবিকা সংকটের মুখে পড়ে। স্বল্পশিক্ষিত ও দরিদ্রদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যাশিত কাজ পাননি।

গত বছরের মার্চের শেষ দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তখন শ্রমজীবী মানুষের সহায়তায় সরকার ত্রাণ সহায়তা দেয়। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও অনেক ত্রাণ দেওয়া হয়। তখন শহরের বিত্তবান মানুষের বাড়ির সামনে ত্রাণ প্রত্যাশী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কিন্তু চলতি বছর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে দেখা গেল, এবার সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে ত্রাণসহায়তা অনেকটাই কম।

বিআইজিডি ও পিপিআরসির জরিপে দেখা গেছে, গত বছর সাধারণ ছুটি ও বিধিনিষেধের সময় ৪৫ শতাংশ পরিবার সামান্য ত্রাণ পেলেও এ বছর তা নেমে এসেছে ২৩ শতাংশে। এতে শহরের শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন আরও কষ্টকর হয়েছে।

পিপিআরসির চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হয়েছে। আবার যে নতুন ঢেউ আসবে না, তা-ও বলা সম্ভব নয়। ফলে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্যসেবা, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালার সমন্বয়ে সার্বিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

তিনি আরও বলেন, যে নীতিই করা হোক না কেন, সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গ মাথায় রেখেই তা করতে হবে। শহরের শ্রমজীবী মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে তাদের জন্য বড় আকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী দরকার।

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.