টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

অবশেষে পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ভক্তদের চাওয়া। প্রত্যাশা ছিল কোপা আমেরিকার স্বপ্নের এক ফাইনালে খেলবে দুটি দল। প্রথম সেমিফাইনাল জিতে সেই মঞ্চটা সাজিয়ে রেখেছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। বাকি ছিল শুধু আর্জেন্টিনার প্রত্যাশা পূরণের। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়েই তারা নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণ!

কোপার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ বুধবার (০৭ জুলাই) এস্তাদিয়ো ন্যাসিওনাল দে ব্রাসিলিয়ায় নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে সমতা বিরাজ করায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ৩-২ ব্যবধানে জিতে ফাইনালের টিকিট কেটেছে আর্জেন্টিনা।

টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার মেসি ও কলম্বিয়ার কুয়াদ্রাদো জাল খুঁজে পান। কিন্তু মিস করেন আর্জেন্টিনার রদ্রিগো দে পল ও কলম্বিয়ার সানচেজ। এরপর মিস করেন কলম্বিয়ার মিনাও। তবে জাল খুঁজে নেন পারেদেস। আর্জেন্টিনার মার্তিনেস লক্ষ্যে বল পাঠানোর পর কলম্বিয়ার মিগুয়েল সফল হলেও তার সতীর্থ কারদোনা মিস করেন। ফলে জিতে যায় আর্জেন্টিনা।

পারেদেস, আকুনাকে বসিয়ে আর্জেন্তিনার কোচ মাঠে নামান তাগলিয়াফিকো ও রদ্রিগেসকে। অন্যদিকে কলম্বিয়া মুরিয়েলকে বসিয়ে কুয়াদ্রাদোকে একাদশে নামায়।

খেলার শুরুতেই লউতারো মার্তিনেসকে দিয়ে গোল করান মেসি। সপ্তম মিনিটে পেনাল্টি বক্সে বল পেয়ে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে লউতারোর দিকে ব্যাক-পাস দেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। আর বল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড।

ম্যাচে দলের প্রথম গোলে অবদান রেখে নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন মেসি। এখন পর্যন্ত চলতি কোপায় তার অ্যাসিস্ট হলো ৫টি। এর আগে এক আসরে ৪টির বেশি অ্যাসিস্ট ছিল না আর কারো।

গোল হজমের দুই মিনিট পরেই সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়া। কিন্তু কুয়াদ্রাদোর শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ৩৮তম মিনিটে কুয়াদ্রাদোর কর্নার থেকে হেডে গোল করার চেষ্টা করেন মিনা। তার হেডার ক্রসবার ছুঁয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়।

বিরতির আগে মেসির কর্নার কিক থেকে বল ছয় গজ বক্সে পান গঞ্জালেস। হেডও নেন গঞ্জালেস, কিন্তু বল জালে প্রবেশের ঠিক আগে বল ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন গোলরক্ষক।

দ্বিতীয়ার্ধে কলম্বিয়া ধীরে ধীরে আক্রমণের গতি বাড়াতে থাকে। বল দখলেও এগিয়ে যায় তারা। ৬১তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দেখাও পেয়ে যায় কলম্বিয়া। কারদোনার ফ্রি-কিক থেকে বল নিয়ে আর্জেন্টিনার রক্ষণে ঢুকে দারুণ এক ফিনিশিংয়ে সমতা টানেন লুইস দিয়াজ।

৬৭তম মিনিটে গঞ্জালেসকে তুলে নিয়ে দি মারিয়াকে মাঠে নামায় আর্জেন্টিনা। ৮২ মিনিটে এই পিএসজি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের পাস থেকে বল ধরে শট নেন মেসি। বল পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও যোগ করা সময়ে দুই দল আর লক্ষ্যের দেখা না পেলে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয় পেনাল্টি শুট-আউটে।

টাইব্রেকারে কলম্বিয়া প্রথম শট নেন কুয়াদ্রাদো। ঠেকাতে পারেননি মার্টিনেজ, গোল। ১-০। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শট নেন মেসি, দুর্দান্ত শট। চোখের পলকে এটাও গোল। ১-১।

কলম্বিয়ার দ্বিতীয় শট নিতে আসেন ডেভিনসন সানচেজ। বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে সানজের শট ফিরিয়ে দিলেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক মার্টিনেজ। গোল হলো না। ১-১। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় শট নিতে আসেন রদ্রিগো ডি’পল। খুবেই বাজে শট। বারের ওপর দিয়ে মেরে দিলেন তিনি। গোল হলো না। ১-১।

কলম্বিয়ার তৃতীয় শট নিলেন ইয়েরি মিনা। আবারও ঝাঁপিয়ে পড়ে মিনার শট ফিরিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। গোল হলো না। ১-১। আর্জেন্টিনা তৃতীয় শট নিলেন লিয়ান্দ্রো পেরেডেস। ডেভিড ওসপিনা ঝাঁপিয়ে পড়েও ফেরাতে পারলেন না। গোল। ১-২।

কলম্বিয়ার চতুর্থ শট নিতে আসেন মিগুয়েল বোরজা। এটি ঠেকাতে পারলেন না মার্টিনেজ। গোল। ২-২। আর্জেন্টিনা চতুর্থ শট নেন লওতারো মার্টিনেজ, এটিও গোল হয়ে গেলো। ওসপিনা ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি। ২-৩।

এবার নিজেদের শেষ শট নিতে আসেন কলম্বিয়ার ১০ নম্বর জার্সিধারী ফুটবলার এডউইন করডোনা। তার দুর্বল শটটিও ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। শট ঠেকিয়েই জয়ের আনন্দে দৌড় দিলেন মার্টিনেজ।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.