মডার্নার করোনা টিকা আনতে চায় রেনাটা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি রেনাটা লিমিটেড উদ্যোগে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না উদ্ভাবিত করোনারোধী টিকা আমদানি বিক্রি করতে চায়। এ বিষয়ে অনুমতি চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে একটি চিঠি দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই চিঠিসহ নথিপত্র ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর কাছে পাঠিয়েছে। তবে ওষুধ প্রশাসন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রেনাটা লিমিটেড যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না কোম্পানির টিকা আনার চেষ্টা করছে। ওরা আমাদের কাছে আবেদন করেছিল। তাদের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আমরা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে পাঠিয়েছি। তারা যাচাই বাছাই করে দেখবেন কোম্পানির সক্ষমতা রয়েছে কি না। এসব বিষয় দেখার পর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত জানাবে।

জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে মডার্নার টিকা আনার অনুমতি চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠায় রেনাটা। কিন্তু তখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা আমদানি নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা না থাকায় রেনাটার আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ পায়নি। কারণ বাংলাদেশের বাস্তবতায় মডার্নার টিকার চেয়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বেশি উপযোগী। কারণ মডার্নার টিকা মূন্য ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। রাজধানী ঢাকার বাইরে এই ধরনের অবকাঠামো নেই বললেই চলে।

উল্লেখ, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকার তিন কোটি ডোজ আমদানির জন্য একটি চুক্তি করে দেড় কোটি ডোজের মূল্য আগাম পরিশোধ করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। চুক্তি অনুসারে, প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। কিন্তু ভারতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির অজুহাত দেখিয়ে মাঝপথে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে সেরাম। বাংলাদেশে সরকার বেক্সিমকো ফার্মার কাছ থেকে টিকা কিনে তা দিয়ে সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সেরামের টিকা রপ্তানি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে সরকারের টিকাদান কর্মসূচি বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। বাধ্য হয়ে সরকার নতুন করে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সময়মতো টিকার সরবরাহ না এলে প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

সেরাম টিকা রপ্তানি স্থগিত করে দেওয়ার পর সরকার করোনার বিকল্প উৎসের জন্য হন্যে হয়ে উঠে। দ্রুততম সময়ে রাশিয়ার উদ্ভাবিত স্পুতনিক ভি ও চীনের সিনোভ্যাক ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় জানা যায়, মডার্নার টিকা আমদানির আবেদনের খবর।

উল্লেখ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে ক’টি করোনার টিকার অনুমোদন দিয়েছে, মডার্নার টিকা তার অন্যতম। এই টিকার কার্যকারিতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, টিকাটি ১৮ থেকে ৬৪ বছর পর্যন্ত বয়সীদের ক্ষেত্রে ৯৫.৬ শতাংশ কার্যকর। তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এর কার্যকারিতা ৮৬.৪ শতাংশে নেমে আসে।

মুশকিল হচ্ছে, মডার্নার টিকার সংরক্ষণ পদ্ধতি বেশ জটিল। এই টিকা রাখতে হয় স্ট্যান্ডার্ড ফ্রিজারের তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই ধরনের কোল্ড চেইন বাংলাদেশে রক্ষা করা বেশ কঠিন। তাই মডার্নার টিকা আমদানির অনুমতি দিলেও সেটি দিয়ে ঢাকাসহ মাত্র দুই তিনটি বড় শহরে টিকা দান কর্মসূচি চালানো যাবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.