বেক্সিমকো ফার্মাকে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব সেরামের

উৎপাদন ও সরবরাহ সংকটে প্রচণ্ড চাপে থাকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ভারতের বাইরে একাধিক দেশে করোনা ভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে। এই তালিকার মধ্যে তারা বাংলাদেশকেও রেখেছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি বাংলাদেশে তাদের উৎপাদিত টিকার একমাত্র পরিবেশক বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে টিকা উৎপাদনের মতো ইউনিট স্থাপনের বিশাল বিনিয়োগের আগে সেরামের কাছে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত পরিকল্পনা জানতে চায়। ইতোমধ্যে বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

দেশের অন্যতম শীর্ষ সংবাদপত্র ডেইলি স্টারও টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব সংক্রান্ত বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপনকে উধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, এখানে বেক্সিমকো কত সংখ্যক ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে এবং তা কোথায় বাজারজাত করা যাবে- সেরামকে সেসব বিষয় বিস্তারিত জানাতে বলেছে কোম্পানিটি। বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, টিকা উৎপাদনের ইউনিট স্থাপনের মতো বিশাল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য  বিস্তারিত তথ্য জানা দরকার, দরকার সম্ভাব্যতা যাচাই করা। নইলে ওই বিনিয়োগ কোনোভাবেই লাভজনক হবে না।

উল্লেখ, সেরাম ইনস্টিটিউট ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনাকা উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদন ও বাজারজাত করছে, যার ব্র্যান্ড নাম কোভিশিল্ড। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সেরামের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানির জন্য একটি চুক্তি করে দেড় কোটি ডোজের মূল্য আগাম পরিশোধ করেছে। চুক্তি অনুসারে, প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। কিন্তু ভারতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির অজুহাত দেখিয়ে মাঝপথে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে সেরাম। বাংলাদেশে সরকার বেক্সিমকো ফার্মার কাছ থেকে টিকা কিনে তা দিয়ে সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সেরামের টিকা রপ্তানি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে সরকারের টিকাদান কর্মসূচি বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। বাধ্য হয়ে সরকার নতুন করে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সময়মতো টিকার সরবরাহ না এলে প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

শুধু বাংলাদেশ নয়, সেরামের উপর নির্ভর করে বিশ্বের আরও কিছু দেশ ফেঁসে গেছে। এমনকি দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রহণ করা বিনা মূল্যে টিকা সরবরাহের কোভ্যাক্স নামের উদ্যোগও হুমকীর মুখে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে সেরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনেওয়ালা গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, তারা ভারতের বাইরে একাধিক দেশে কোভিশিল্ড উৎপাদনের কথা ভাবছেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই বেক্সিমকো ফার্মাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কোভিশিল্ড টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে মাত্র তিনটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে-ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের টিক উৎপাদনের মতো কোনো ইউনিট বা অবকাঠামো নেই। তাই কোভিশিল্ড উৎপাদন করতে চাইলে কোম্পানিটিকে নতুন ইউনিট স্থাপন করতে হবে, যা একইসঙ্গে সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.