বদলেছে ইফতারের মেনু, তালিকার শীর্ষে ফল-পানীয়

করোনার সংক্রামণ ঠেকাতে চলছে কঠোর লকডাউন। এর প্রভাব পড়েছে ইফতারের বাজারেও। মানুষের জীবনধারায় এসেছে পরিবর্তন। বদলেছে খাবার মেনু। আগে যেখানে ইফতারের তালিকায় উপরের সারিতে স্থান পেতো আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপি, পেঁয়াজু, ছোলা-মুড়ির মতো ভাজাপোড়াগুলো, এখন সেস্থান দখলে নিয়েছে ফল এবং পানীয়।

ইফতারের বাজারে কিছুক্ষণ ঘুরলেই এ পরিবর্তন বোঝা যাবে সহজে। আজ রোববার (১৮ এপ্রিল) দিনভর রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের শাহী মসজিদ রোড, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিলসহ বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, ভাজা খাবারের চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফল এবং পানীয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশের সাথে মানুষের স্বাদ এবং রুচিতে পরিবর্তন আসতে পারে। এজন্যই হয়তো আগে যেসব খাবার তালিকার শুরুর দিকে থাকতে এখন সেগুলোর অবস্থান শেষের দিকে।

পুষ্টিবিদ সামিনা জামান কাজরি অর্থসূচককে বলেন, মানুষের সচেতনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ফল ও পানি জাতীয় খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষ তাই দিনকে দিন পুষ্টিকর খাবারগুলো খাওয়ার চেষ্টা করছে। করোনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। নতুন এই অভ্যাসের ফলে আমাদের সমাজে দীর্ঘমেয়াদে একটা ভালো ফল আসবে।

তিনি বলেন, ভাজাপোড়াগুলো আমাদের পুরো এড়িয়ে চলাও উচিত নয়। ঘরে তৈরি ছোলার মতো অনেক খাবার রয়েছে যেসব আমাদের দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টির জোগান দেয়। তবে, এসময়টাতে বাইরে থেকে খোলা বা ভাজাপোড়া খাওয়া ঠিক নয়।

দেশে চলা কঠোর লকডাউনের আজ পঞ্চমদিন। মানুষের আনাগোনা শুরুর দিককার দুই দিনের তুলনায় বেশ বেড়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বাজারে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অনেক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি হয়েছে উপেক্ষিত।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায় আজ তরমুজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বাড়লো প্রায় ২০-২৫ টাকা। গত সপ্তাহেও তরমুজ বিক্রি হচ্ছিল ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। শশা ৬০-৮০ টাকা কেজি।

দাম বেড়েছে মালটারও। এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া আমদানি করা মালটা এখন ১৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ ভালো মানের মালটা ১৮০ টাকায়ও বিক্রি করছেন।

সরবত তৈরি উপযোগী বেলের দামও দ্বিগুণ বেড়েছে। বাজারে প্রতিটি ছোট আকারের বেল এখন ৫০ টাকা, মাঝারি ৮০ টাকা আর বড় ও দেখতে হৃষ্টপুষ্ট বেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকায়।

অতি ছোট আকারের আনারসও প্রতিটি ৪০-৫০ টাকার নিচে মিলছে না, যা সাধারণ সময়ে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে থাকে। আকারে বড়গুলোর দামও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

আমদানি ফলের মধ্যে এই সপ্তাহে সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২০০ টাকা, লাল আপেল ১৮০ টাকা। গত এক সপ্তাহের চেয়ে দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা। প্রতিকেজি নাসপাতি ও আঙ্গুর ২৫০ টাকা, আতাফল ১৮০ টাকা, পেঁপে ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং বাঙ্গি ৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনের কারণে যথাযথভাবে পণ্য আসছে না। তাই কিছু পণ্যের দাম বাড়তি। বেড়েছে কিছু ফলের দামও। বর্তমান সময়ে ইফতারে কলা, আপেল, খেজুর, মাল্টা ও শসার খুব চাহিদা।

খেজুর বিক্রেতা জামাল হোসেন অর্থসূচককে বলেন, এবার খেজুরের দাম বাড়েনি বললেই চলে। রোজা শুরুর আগে যেমন ছিল, এখন তেমনই আছে। এবার সরবরাহ বেশ ভালো। মাবরুম প্রতিকেজি ৮০০, মেটজুল ৮০০ থেকে ১০০০, আজোয়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। সাধারণ মানের দাবাস ২২০ টাকা প্রতি কেজি।

তরমুজ বিক্রেতা রহমত জানান, লকডাউনে বেশিরভাগ বাজার ও দোকানপাঠ বন্ধ থাকায় তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয় আর এরপর বেঁচতেও হয় আগের চেয়ে বেশি দরে।

রোজার মওসুমে দেশি ফলের দাম বেড়ে যাওয়াকে বিশেষ সমস্যা মনে করছেন না অনেক ক্রেতা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মওসুমি এসব ফলের দাম বেড়ে যাওয়াটা অনেকটা স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন তারা। তবে, অনেকে আবার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে লকডাউনের কথা বলছেন।

রহমান হোসেন নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা অর্থসূচককে বলেন, দু’দিন আগেও যে সবরি কলা ৮০-৮৫ টাকা ডজন কিনেছি এখন সেই কলা ১২০-১৩০ ডজন। অর্থাৎ এক হালি কলার দাম ৪০-৪৫ টাকা। মঙ্গলবার এক ডজন চাম্পা কলা কিনেছি ৪০ টাকায়। আজকে সেই কলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা ডজন। ডাবল দাম।

সজল হোসেন নামের এক ক্রেতা এসেছিলেন পেঁয়াজু, আলুরচপ কিনতে। তিনি অর্থসূচককে বলেন, এখন বাইরের খাবার খাওয়া ঠিক না জানি, কিন্তু ব্যাচেলর বাসায় আমাদের এসব তৈরি করেও খাওয়া সম্ভব নয়। তাই ঝুঁকি নিয়েই এসব খাচ্ছি।

এদিকে বিভিন্ন এলাকায় বেশিরভাগ খাবার দোকানই বন্ধ দেখা গেছে। কিছু দোকানের সামনে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, পাকোড়া, নিমকি, চিকেন, নানা ধরনের জিলাপি সাজানো দেখা যায়। কিন্তু ক্রেতার উপস্থিতি এসব জায়গায় কমই মনে হলো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের কারণে রোজাদাররা এখন বাসায় ইফতার করছেন। ফলে বিক্রি কমেছে। তারা বলেন, করোনার কারণে অনেকে ভাজাপোড়া খাচ্ছে না। তারা ইফতার করছেন ফল দিয়ে।

অন্যদিকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়া বারণ থাকায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা রেখেছে রাজধানীর অনেক রেস্টুরেন্ট।

এছাড়া ফুডপান্ডা, পাঠাও ফুড, ই-ফুডের মতো সেবাগুলোও চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। আর লকডাউন মোকাবিলায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইনে নানা অফার দিচ্ছে রেস্তোরাঁগুলো।

এ বিষয়ে হেড অব ই-ফুড মুস্তাহিদুল ইসলাম বাধন অর্থসূচককে বলেন, যেহেতু রোজার সময়, তো দিনের সময়ে ফুড ডেলিভারির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে ইফতারির খাবার ডেলিভারির ক্ষেত্রে আবার চাপ বাড়ে। সেই সাথে ই-ফুড সেহরির সময়েও খাবার সরবরাহ করে। তাই ইফতারি এবং সেহরিতে খাবার সরবরাহের চাপ থাকে।

অর্থসূচক/আরএ/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.