মিয়ানমারে রাতভর জান্তা সরকারের অভিযান, নিহত ৬০

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শুক্রবার (০৯ এপ্রিল) রাতভর অভিযান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এসময় তাদের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৬০ জন। তবে ভুক্তভোগী পরিবার বা স্থানীয়রা নিহত সবার মরদেহ সংগ্রহ করতে পারেননি, সেগুলোর বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে ৯১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাগো শহরে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত রাতভর অভিযান চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভ দমনে জান্তা বাহিনী বন্দুকের পাশাপাশি মেশিনগানের গুলি, গ্রেনেড এবং মর্টার ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শুক্রবার মিয়ানমারের বাগো শহরে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেডও সরিয়ে দিয়েছে তারা। আন্দোলনের সময় সেসব ব্যারিকেড বিক্ষোভকারীরা রাস্তার ওপর রেখেছিলেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দার বরাত দিয়ে রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত স্থানীয়রা মাত্র তিনটি মরদেহ উদ্ধার করতে পেরেছেন। বাকিগুলো সেনা সদস্যরা স্থানীয় একটি প্যাগোডা এবং স্কুলে নিয়ে ফেলে রেখেছে।

ছবি- আল জাজিরা।

এদিকে জান্তা সরকারের দমনপীড়ন ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় মিয়ানমারের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি দেশটিতে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত কিয়াও মোয়ে তুন।

এছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সামরিক সরকারের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, রাষ্ট্রপরিচালিত মিয়ানমার রেডিও ও টেলিভিশনের (এমআরটিভি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার ১৯ বেসামরিক লোককে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে জান্তা সরকার। তাদের বিরুদ্ধে গত মাসে ইয়াঙ্গুনের ওক্কালাপা এলাকায় এক সেনা কর্মকর্তাকে পেটানো এবং নির্যাতন করে আরেক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওই ১৯ আসামির নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীও রয়েছে। তারা সবাই বর্তমানে পলাতক।

আরএফএ’র হিসাবে, মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫০ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে। সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক বছরের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে। তখন থেকে প্রায় প্রত্যেকদিন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন।

সূত্র: আল-জাজিরা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.