আমরা জানি আপনারা কারা: তথ্যমন্ত্রী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে সফর উপলক্ষে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা জানি আপনারা কারা।

শনিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু ফর ইউ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালি জাতির মুক্তির অনুপ্রেরণা ছিলেন। শুধু তাই নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্যও অনুপ্রেরণা ছিলেন। সেজন্য সারা পৃথিবীতে তাকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং হবে। তিনি হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালিদের জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি ঘুমন্ত বাঙালিকে অস্ত্র তুলে ধরতে শিখিয়েছিলেন। বাঙালিরা শেখ মুজিবুর রহমানের কথা শুনে জীবন হাতে নিয়ে একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে বহু নেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো কোনও নেতা উদ্বুদ্ধ করতে পারেননি। তার কথায় মানুষ নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছিল। আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধ দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ নয়, এটা ছিল জনযুদ্ধ। সেই জনযুদ্ধে বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর কথায় বুকে বুলেট পেতে নিয়েছিল। এভাবে বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের একত্রিত করেছেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।’

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পৃথিবীতে বিরল। বাঙালিদের জন্য কোনও স্বাধীন রাষ্ট্র ছিলো না। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি। কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান সেটা আমাদের দ্বিতীয় পরিচয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র নির্মাণের পর যখন আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অধিকারের ওপর আঘাত আসলো, তখন বঙ্গবন্ধু আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিলেন। আমাদের সকলের মিলিত রক্তের স্রোতের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে।’

দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনা প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার রচনা করা হয়েছে। যারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, তারা আজকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর আঘাত হেনেছে। গতকাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে তারা ভারতের মান্যবর প্রধানমন্ত্রীর আগমন নিয়ে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা চালিয়েছে। তিনি (নরেন্দ্র মোদী) কোনও দলের নেতা হিসেবে বাংলাদেশে আসেননি। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাতে বাংলাদেশে এসেছেন।’

‘যে ভারতবর্ষ ১৯৭১ সালে এক কোটি মানুষকে (বাঙালি) আশ্রয় দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে রক্ত ঝড়িয়েছে, সেই দেশের মান্যবর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানা যায় না। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী সমগ্র পৃথিবীতে চষে বেড়িয়েছেন (একাত্তরে) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য। সেই ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশে এসেছেন। অথচ তার আগমন নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।’

মন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সঙ্গে রেলস্টেশন জ্বালিয়ে দেওয়ার কী সম্পর্ক? ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হলো কেন? এরা সবাই দুষ্কৃতিকারী, শান্তি ও সম্প্রীতির শত্রু। এদের যদি খোঁজ খবর নেই, তবে দেখা যাবে, এদের বাবা-দাদারা সব রাজাকার ছিল ও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। তাদের বাবা-দাদারা নারী নির্যাতন ও গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের নমনীয়তাকে দুর্বল ভাববেন না। যারা দেশকে বিশৃঙ্খল করছেন তাদের মূল উৎঘাটনে আমরা বদ্ধপরিকর। যারা এখন দেশে বিশৃঙ্খল করছে, তারা ২০১৩-১৪ সালে বিশৃঙ্খলতা করেছিল। তারা একইগোষ্ঠী এবং তাদের সঙ্গে ছিল বিএনপি। আমরা জানি আপনারা কারা? বায়তুল মোকাররমে, পবিত্র কুরআনে আগুন জ্বালিয়েছিলেন। পশু-পাখিও আপনাদের হাতে রেহাই পায়নি।’

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশে’ এর প্রধান সমন্বয়ক এ এস এম শামছুল আরেফিন, সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ, সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশের ভারত সমারোহের সহ-সভাপতি সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য শ্রী সত্যম রায় চৌধুরী, কার্যকারী সভাপতি ড. রাধা তমাল গোস্বামী, দীপ প্রকাশনের প্রকাশক শ্রী শংকর মন্ডল, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায় প্রমুখ।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.