গোদরেজ গ্রুপের ৫৯ হাজার কোটি রুপির ব্যবসা ভাগ হচ্ছে

ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী গোদরেজ ভেঙে গেছে। গ্রুপটির মালিকেরা তাঁদের ব্যবসা ভাগ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৫৯ হাজার কোটি রুপির এই ব্যবসা ভাগ হয়ে যাচ্ছে।

পরিবারের সদস্যরা কে কোন ব্যবসার মালিকানা পাচ্ছেন, তা ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে মানুষের জানা হয়ে গেছে।

তবে কেন ভেঙে যাচ্ছে এত দিনের পুরোনো এই ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। ভাঙনের কারণ সম্পর্কে গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গোদরেজ পরিবারের সব সদস্যের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়—এই ভিন্নতার স্বীকৃতি দিতে শ্রদ্ধা ও সচেতনতার সঙ্গে সম্পদের এই পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। একতা বজায় রাখতে এটা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গোষ্ঠীর ব্যবসা-বাণিজ্যের কৌশলগত দিকনির্দেশনা, লক্ষ্য, গতি এগুলো আরও উন্নত করার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারসহ সব অংশীজনের জন্য ‘দীর্ঘ মেয়াদে মূল্য তৈরিতে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গোদরেজ পরিবারের এই বিবৃতির সঙ্গে গোষ্ঠীর শীর্ষ কর্তা আদি গোদরেজের আগের এক বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেছিলেন, ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেই বছর প্রয়াত শিল্পপতি রাহুল বাজাজকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে মোদি সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে মানুষের মনে। আপনারা ভালো কাজ করছেন; তা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে কেন্দ্রের সমালোচনা করলে সরকার সেই সমালোচনা ভালোভাবে নেবে, সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের নেই।

গোষ্ঠীর আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা নাদির গোদরেজ ২০২২ সালে বলেছিলেন, দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে, বন্ধ করতে হবে বিভাজন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যে সেটা দরকার, সরকার তা জানে—সে বিষয়েও তিনি নিশ্চিত বলে দাবি করেন। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘শিল্প খাতেরও উচিত, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করা—সরকারকে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগী হতে হবে।’

তাঁদের এই বক্তব্য তখন বেশ আলোড়ন তৈরি করে ভারতের সমাজে। শিল্পপতিরা সাধারণত এ রকম ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ সামাজিক ও রাজনৈতিক মন্তব্য করেন না। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, শিল্পপতিরা সাধারণত এমন মন্তব্য করেন না, সে ক্ষেত্রে তাঁদের সেই বক্তব্য ছিল বিরল ঘটনা।

গোদরেজ পরিবারের ভাঙন নিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। যদিও এই ভাঙন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়েছে। ফলে ২০১৯ ও ২০২২ সালে ভারতের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে তাঁরা যে কথা বলেছিলেন, তার সঙ্গে ভাঙনের সময়ের পরিবারের বিবৃতির অনেকটা মিল আছে বলে দেখা যায়।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গোদরেজ এন্টারপ্রাইজের অন্তর্গত গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস রয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করবেন জামসেদ গোদরেজ। এর মধ্যে এরোস্পেস থেকে এভিয়েশন, প্রতিরক্ষা, আসবাবপত্র ও আইটি সফটওয়্যার থাকবে। জামসেদ গোদরেজ এর চেয়ারপার্সন ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হবেন। তার বোন স্মিতার কন্যা নাইরিকা হোলকার (৪২) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে থাকবেন। তাদের মালিকানার অন্তর্গত হবে মুম্বাইয়ের ৩ হাজার ৪০০ একরের জমি।

অপরদিকে, গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপের অধীনে থাকা গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, গোদরেজ কনজিউমার প্রোডাক্টস, গোদরেজ প্রপার্টিজ, গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট ও অ্যাসটেক লাইফসায়েন্সের মালিকানা থাকবে নাদির গোদরেজের অধীনে। তিনি চেয়ারপার্সন পদে থাকবেন। আদি, নাদির ও তার পরিবারই এই ব্যবসাগুলো দেখবেন। আদির ছেলে পিরোজসা গোদরেজ (৪২) গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপের এক্সিকিউটিভ হবেন। ২০২৬ সালের আগস্ট মাসে তিনি চেয়ারপার্সন পদে দায়িত্ব নেবেন।

অর্থসূচক/

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.