শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্যসহ ৫০ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত।

আজ (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার সময় সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীরের আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এসএম মুনীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে আজ সকালেই এ মামলায় জেলহাজতে থাকা ৩৪ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে তোলা হয়।

রায়ে সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ রিপন ও আরিফ নামে মোট তিনজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া আব্দুল কাদের নামে এক আসামির ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। রায়ে সর্বনিম্ন সাজা দেয়া হয়েছে চার বছর।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস. এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি ও শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ। আসামি পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট শাহানারা আক্তার বকুল, অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাডভোকেট তোজাম্মেল হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সেলিম প্রমুখ।

মামলায় আসামির সংখ্যা ৫০ জন। এর মধ্যে ১৫ জন পলাতক রয়েছেন। ৫০ জন আসামির মধ্যে টাইগার খোকন নামের একজন আগে থেকে অন্য মামলায় জেলহাজতে আটক রয়েছেন। আসামিরা হলেন— সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া পৌরসভার দুইবারের সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা গাজী আক্তারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন ও আবদুর রকিব মোল্লা, মো. আব্দুল কাদের বাচ্চু, মো. আরিফুর রহমান ওরফে রঞ্জু, মো. নজরুল ইসলাম, রিপন, মো. আব্দুল রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. মফিজুল ইসলাম, মো. আব্দুল মজিদ, মো. হাসান আলী, মো. ইয়াছিন আলী, ময়না, মো. আব্দুস সাত্তার, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, মো. তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. আব্দুল মালেক, আব্দুর রব, মো. জহুরুল ইসলাম, মো. রবিউল ইসলাম, মো. গোলাম রসুল, রিংকু, মো. আব্দুল সামাদ, মো. আলাউদ্দিন, মো. আলতাফ হোসেন, সঞ্জু, মো. নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, মো. সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন, জাবিদ রায়হান লাকী, রকিব, ট্রলি শহিদুল, কনক, শেখ কামরুল ইসলাম, মো. মনিরুল ইসলাম, মো. ইয়াছিন আলী, শেলী, মো. শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, মো. সোহাগ হোসেন, মো. মাহাফুজুর রহমান মোল্লা, মো. আব্দুল গফফার গাজী ও মো. মাহফুজুর রহমান সাবু।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে যশোরে ফরছিলেন। এ সময় কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার ওপর জেলা বিএনপির সভাপতি ও তৎকালীন এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাস রাস্তার ওপর আড়াআড়ি থামিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালান। হামলায় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদী হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ১৬ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। গত ২৭ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে কাঠগোড়ায় থাকা ৩৪ জনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীর।

অর্থসূচক/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.