করোনার প্রকোপ যেতে না যেতেই পারিশ্রমিক বাড়ালেন তারকারা

চলচ্চিত্রের মতো নাটকেও নানা সংকট। অভিযোগ ভালো গল্পকার, প্রযোজক, প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট নেই। এছাড়া একদিনে শুটিং শেষ করার পায়তারা। যা নাটক পাড়ায় কান পাতলেই প্রতিনিয়ত শোনা যায়।

হতাশার মাঝেও যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা তখনই বিশ্বজুড়ে সকলের স্বস্তি কেড়ে নেয় করোনা ভাইরাস। গত কয়েক বছর ধরে কমেছে নাটকের মান। বেড়েছে ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণ। বৃদ্ধি পাচ্ছে মানহীন নাটকের সংখ্যা। দিন দিন কমছে নাটকের বাজেট। করোনা যেন মরার ওপর খাঁড়া ঘা। মার্চে আসা করোনা ভাইরাসে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে বিনোদন দুনিয়া। নতুন বছর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যেয়ে শুরু হলে তারকাদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর হিড়িকে হুমকির মুখে বাংলা নাটক।

নতুন বছরের শুরুতে বেশ কয়েকজন শিল্পী তাদের পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, সাফা কবির, মিশু সাব্বির, শামীম হাসানসহ একাধিক শিল্পী।

করোনা মহামারির মধ্যেই পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। গত বছর পর্যন্ত তৌসিফ একটি একক নাটকে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক নিতেন ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সাল থেকে এই অভিনেতা ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নেবেন। জোভান আহমেদ প্রতিটি নাটকের জন্য গত বছর পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিতেন ৪০ হাজার টাকা। নতুন বছরে জোভানকে নিতে হলে গুনতে হবে ১০ হাজার টাকা বেশি অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা। মহামারি করোনার মধ্যেই অপূর্ব ৭০ হাজার পারিশ্রমিক থেকে এক লাখ নিয়েছেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও দিতে বাধ্য হয়। একইভাবে মোশাররফ করিম, আফরান নিশো, মেহজাবীন চৌধুরীরও পারিশ্রমিক বেড়ে গেছে। ঈদুল আজহার পরই তাঁরা প্রায় লাখ টাকার মতো পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। কাজের মানের চেয়ে পারিশ্রমিক বাড়ানোয় নজর দিচ্ছেন এসব শিল্পীরা। কাজ থেকে তাদের কাছে পারিশ্রমিকই মুখ্য।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাংলা নাটকের হাতে গোনা কজন অভিনয় শিল্পীর পারিশ্রমিক বাড়ানোর অসুস্থ প্রতিযোগীতায় নেমেছে। তারা বলছে, ইউটিউব চ্যানেল ভিউ বেশি আছে এমন অভিনয় শিল্পীদের পারিশ্রমিকই তারা বাড়াচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ইউটিউবে ওই বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া শিল্পীদের অনেকের নাটকেই এখন আর কাঙ্ক্ষিত ভিউ হচ্ছে না। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো।

কিছু বছর আগে সঙ্গীত শিল্পীদের ঠিক এভাবেই পারিশ্রমিক বাড়িয়ে কিছু অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শেষতক পুরো সেক্টরটাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এবার ওই একই অপশক্তি বাংলা নাটক সেক্টরের বারোটা বাজাতে তৎপর।

বর্তমানে বেশিরভাগ নাটকের কাহিনী প্রেম ও বিরহ কেন্দ্রিক। একটা সময় টেলিভিশনে মানসম্মত পারিবারিক নাটকের সয়লাব থাকত। এখন সেসব নাটরে জায়গা দখল করেছে ভালবাসা নির্ভর গল্পের নাটক-টেলিছবি। এবং ক্রমেই ভিউয়ের দৌড়ে নির্মিত হচ্ছে ‘অশ্লীল’ বাক্যর সুরসুরি দেওয়া নাটক। সদ্য বিদায় নেওয়া বছর যতগুলো নাটক নির্মিত হয়েছে তার অধিকাংশ নাটক ছিল ‘সুরসুরি’ দিয়ে মানুষ হাসানোর গল্প।

যেখানে নাটকের শিল্পীরা পারিশ্রমিক বাড়ানোর উৎসবে মেতেছেন ঠিক তখনই স্বস্তি দেয় সংগীত শিল্পী সালমার পারিশ্রমিক কমানোর খবর। করোনার এই সংকটকালে পারিশ্রমিক কমিয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমা। গত তিন মাসে ৪০টি নতুন গানে কন্ঠ দেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন এ শিল্পী। এ গানগুলোতে কন্ঠ দিয়েছেন আগের থেকে অর্ধেক পারিশ্রমিকে। করোনার জন্য এ পারিশ্রমিক কমিয়েছেন তিনি। করোনার প্রাদুর্ভাবে নিজের তিন ভাগের একভাগ পারিশ্রমিক কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান।

এদিকে তারকাদের পারিশ্রমিক বাড়ার খবরে উদ্বিগ্ন টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো প্রতিদিন নাটকের বাজেট কমছে। সেখানে কিছু মানুষের কারণে তারকাদের বাজেট বাড়ায় আমরা হতাশ। এটা নাটকের জন্য আরও অশুভ সংকেত।

অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, চাহিদা থাকলে পারিশ্রমিক আপনা আপনি বেড়ে যায়, কিন্তু নিজে নির্ধারণ না করাটাই ভালো। কোনো শিল্পী যদি বছরে বছরে পারিশ্রমিক বাড়ান, তা অত্যন্ত দুঃখজনক খবর। অযাচিতভাবে নিজেদের বাজেট বাড়ানোকে আমি নিন্দা জানাই।

ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ভিউকে বাহানা করে কিছু শিল্পী অযৌক্তিকভাবে তাঁদের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে নাটকের সিংহভাগ টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। বাকি টাকা দিয়ে নাটক হবে কি না তা ভাবছেন না।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.