বাংলা শিল্প-সাহিত্যকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিজের মাতৃভাষা সংরক্ষণ, চর্চা ও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে যথাযথ অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা শিল্প-সাহিত্যকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বলেন, ‘আমাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ, চর্চা এবং শক্তিশালী করার পাশাপাশি সঠিক অনুবাদের মাধ্যমে শিল্প-সাহিত্যকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। বাঙালি জাতি যে নিজের ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে তা তুলে ধরা আমাদের সকলের কর্তব্য।’

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করা, চর্চা করা এবং আরো শক্তিশালী করে আমাদের শিল্পকলা, সাহিত্য সব অনুবাদ করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে বাঙালি জাতি যে ভাষার জন্য নিজের জীবন দিয়ে গেছেন সেটা মানুষের সামনে তুলে ধরা আমাদের সকলের কর্তব্য। আর এই ইনস্টিটিউট থেকে আমি সেটাই আশাকরি। সরকার প্রধান বাংলা একাডেমী এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে একে অপরের পরিপূরক-সম্পূরক হিসেবে কাজ কারার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এবং বাংলা একাডেমী এই দু’টোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি তখন এটাই আমাদের মাথায় ছিল। এই দু’টি প্রতিষ্ঠান যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে আমরা আরো অধিক পরিমাণে শিল্প, সাহিত্য, কলাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবো এবং সেটাই তাঁর সরকারের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাষাকে এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে ডিজিটাল ডিভাইসের সাহায্যে অনুবাদ করলেও তা যথাযথ সংশোধনের মাধ্যমে যথোপযোগী করে ব্যবহারের আহ্বানও জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে আসেন যে পদাংক অনুসরণ করে তিনি নিজেও জাতিসংঘে (সাধারণ অধিবেশন) তাঁর প্রতিটি বক্তৃতা বাংলায় করেছেন, যেটা অনুবাদ করেই অন্যান্য ভাষায় দেওয়া হয়। শুধু ভাষণের মধ্যেই নয় বাঙালিকেও মানুষ জানুক, বিশ্ব আরো জানুক। আমরা যে বিজয়ী জাতি, আমাদের একটি ভাষা আছে, সংস্কৃতি আছে সেটাও সারাবিশ্ব জানুক সেটাই আমরা চাই।

প্রধানমন্ত্রী এই সময় ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি বলেন, বাঙালি শান্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা আর যুদ্ধ চাই না,শান্তি চাই। সারাবিশ্বের যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক এবং এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার যে অর্থ তা মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান, গবেষণা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, শিশু ও নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে তাদের স্বাস্থ্য-সবক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হোক সেটাই আমরা চাই। কাজেই শান্তি থাকলেই কিন্তু প্রগতি আসে, উন্নতি হয়, এগিয়ে চলা যায়। দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাবো না।

’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা অর্জন করেছিল এবং ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারের হত্যার পর যা হারিয়ে যায়। সরকার আবার তা পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সাল থেকে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হবে। মাথা উঁচু করেই আমরা মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে এগিয়ে যাব।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.