ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ এবিবি-বাফেদা

করোনার পর অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অর্থপাচার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এতে করে ডলারের দর হু হু করে বেড়ে গত বছরের মাঝামাঝি ১১৪ টাকায় ওঠে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঠিক করে আসছে ব্যাংকগুলো। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুরুতে ডলারের দর রেমিট্যান্সে ১০৮ এবং রপ্তানিতে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে উভয় ক্ষেত্রে ডলার কেনার দর অভিন্ন করা হয়।

এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ডলারের দর ঠিক করার পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছর ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এতেও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি ।

তবে এ সময় দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। তবে অনেক ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজ নির্ধারিত দাম ডলার কেনা-বেচা করছে না। তাই ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে এবিবি ও বাফেদা।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে বাফেদা ও এবিবির নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ২১টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকেরা।

বৈঠক শেষে এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী কোন ব্যাংক চাইলে ১১৬ টাকা পর্যন্ত রেমিটেন্স কিনতে পারবে। কিন্তু ১১১ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। তারপরেও যারা নির্দেশ মানছে না তাদের সাথেও কথা হয়েছে। আমরা একত্রে বাজারটাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসব।

আমদানিকারকেরা নির্ধারিত দামের ডলার পাচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি কোন আমদানিকারকের এরকম অভিযোগ থাকে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এসে জানাতে হবে। তাছাড়া সকল বিষয়ে লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া যায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, সংগঠন দুটির মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত ঠিকমতো বাস্তবায়নের জন্য সাহায্য চাইতে এসেছিলেন তারা। সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। নির্দেশনার বাইরে কোন ব্যাংক অথবা এক্সচেঞ্জ হাউস ডলার কেনাবেচা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি আগের চেয়ে শক্তভাবে তদারকি করা হবে এখন। তাই প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করা যাবে। কিন্তু এর বেশি নয়। যদি কেউ বেশি দামে ডলার কিনেও থাকে তাহলে ১১১ টাকাতেই বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।

এদিকে খোলা বাজারে আজ ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সায়। একদিনেই প্রতি ডলারে দাম বেড়েছে সাড়ে ৪ টাকা, গতকাল যা ছিল ১২২ থেকে ১২৩ টাকা। এর আগে কখনো ডলারের দর এতো উঠেনি। অর্থাৎ ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে।

ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ১২২ টাকার বেশি দরে ডলার কেনার বিষয়টি জানাজানির পর খোলাবাজারেও নগদ ডলারের দর দ্রুত বাড়ছে। গত সপ্তাহেও প্রতি ডলার ১১৮ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল।

 

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.