বড় দেরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক!

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ড. ফরাসউদ্দিন

দেশে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতি বজায় রয়েছে। এর ফলে মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে সঞ্চয়ের টাকা ভেঙে ফেলছেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক দেরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও আগেই এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিলো বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন।

ড. ফরাসউদ্দিনের বক্তব্যের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে  বাংলাদেশ ব্যাংক বড় দেরী করে ফেলেছে।

বুধবার (৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেগুলো আরো আগে নেওয়া উচিত ছিল। পাশাপাশি হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করা পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এ গভর্নর।

তিনি আরও বলেন, দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সেসব সভায় বেশ কিছু পরামর্শ এসেছে। এই পরামর্শ গুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

ইকোনমিক রিসার্স গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দেশের রিজার্ভ কমছে যার মূলে রয়েছে হুন্ডি। রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে হুন্ডির অপতৎপরতা বেড়ে যাওয়াই এমনটা হয়েছে। তাই হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা অন্য কোন পরিচয়কে আমলে নেওয়া যাবে না। তাহলে রেমিট্যান্স বাড়বে এবং সমৃদ্ধ হবে রিজার্ভ।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর সঙ্গে একই বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠক শেষে সানেমের গবেষণা পরিচালক ডক্টর সাইমা হক বিদিশা জানান, সম্প্রতি ব্যাংকের পক্ষ থেকে রেমিটেন্স কেনার ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে এটা কাজে আসবে না। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত ডলারের অফিশিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল রেটে পার্থক্য থাকবে ততক্ষণ রেমিটাররা অবৈধ পথেই ডলার পাঠাবেন। এছাড়াও একটা শ্রেণি রয়েছে যারা হুন্ডির মাধ্যমে ব্যবসা করে। এই চ্যানেলটা বন্ধ করার জন্য শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ততক্ষণ ফরেন কারেন্সিতে একটা আশঙ্কা থেকেই যাবে। এছাড়াও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ সহ আর্থিক খাতের সুশাসন ফেরাতে না পারলে নীতি পরিবর্তনের সুফল যথাযথভাবে আমরা পাবো না।

গত ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে একই বিষয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেদিন নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ। কারণ এ ধরণের প্রবণতা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.