বিশ্বকাপেই ‘প্রতিশোধ’ নিল নিউজিল্যান্ড

যেখানে আগের বিশ্বকাপ শেষ সেখান থেকেই যেন শুরু হলো। ২০১৯ বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডই প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি। কিন্তু রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার রোলার কোস্টারের ড্রাইভার হয়ে যিনি ইংল্যান্ডকে সেই ফাইনালে জিতিয়েছিলেন, সেই বেন স্টোকসই চোটের জন্য নেই প্রথম ম্যাচে। আরও বড় অ্যান্টিক্লাইম্যাক্স-লর্ডসের ভরা গ্যালারির পর আহমেদাবাদে আজ দর্শক খুঁজে পাওয়া দায়। তবে যারা এসেছেন, তারা প্রথম ভাগে ব্যাটে-বলে জমজমাট একটা দ্বৈরথই দেখেছেন। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড তুলেছে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রান।

ইংল্যান্ডের দেয়া ২৮৯ রানের লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে দলীয় ১০ রানেই উইল ইয়ংকে হারায় নিউজিল্যান্ড। ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে লেগ সাইডে সুইং করিয়েছিলেন স্যাম কারান। সেই বল তাড়া করতে গিয়ে নিজের খেলা প্রথম বলেই ইন সাইড এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইয়ং। এরপর ওয়ান ডাউনে নামিয়ে দেয়া হয় রাচিন রবীন্দ্রকে। এরপর নিউজিল্যান্ডকে আর কোনো বেগ পেতে দেননি কনওয়ে ও রাচিন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে নিউজিল্যান্ড জয় পেয়েছে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। আদিল রশিদকে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে চার মেরে মাত্র ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন কনওয়ে।

পরের ৫০ রান পেতে তিনি খরচা করেছেন ৫০ বল। ফলে বোঝাই যাচ্ছে দায়িত্ব নিয়ে খেলে দলের সঙ্গে নিজের রানটাও বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন কনওয়ে। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১২১ বলে ১৫২ রান করে। ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া রাচিন ৮২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সেঞ্চুরির স্বাদ পান। ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটার শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৯৬ বলে ১২৩ রান করে।

এর আগে টসে জিতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। প্রথম ওভারেই ছয়-চার মেরে শুরু করেন জনি বেয়ারস্টো, জানিয়ে দেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ‘বাজবল’ খেলতেই এসেছে। তবে বেয়ারস্টো আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করলেও উইকেট হারাতে দেরি হয়নি ইংল্যান্ডের। শুরু থেকেই ভালো বল করতে থাকা ম্যাট হেনরির অফ স্টাম্পের বাইরের একটা বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ডাভিড মালান। আউট হয়ে যান ২৪ বলে ১৪ রান করে।

খানিক পর এই বিশ্বকাপের প্রথম মনে রাখার মতো শটটা খেলেন জো রুট, রিভার্স স্কুপ করে ট্রেন্ট বোল্টকে উইকেটের পেছন দিকে ছয় মেরে। তবে খেলার ধারার বিপরীতে এরপর আউট হয়ে যান বেয়ারস্টো, মিচেল স্যান্টনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ৩৫ বলে ৩৩ রান করে। তবে ইংল্যান্ডের যে কৌশল, সেখান থেকে সরে আসেনি তারা। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে খেলতেই চলে যায় আরেকটি উইকেট। রাচিন রাভীন্দ্রের বলে দুই চার ও এক ছয়ের পর হ্যারি ব্রুক আরেকটি বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে আসেন ১৬ বলে ২৫ রান করে। মঈন আলীও এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি, ১১ রান করে বোল্ড হয়ে যান অফ স্পিনার গ্লেন ফিলিপ্সের বলে।

রুটের সাথে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক জস বাটলার। দুজনের জুটিতে ৭০ রান চলে আসে ৭২ বলে। বাটলার খেলছিলেন দারুণ, কিন্তু ৪২ বলে ৪৩ রান করে শেষ পর্যন্ত ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। লিয়াম লিভিংস্টোন শেষের দিকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারতেন, তবে বোল্টের নাকল বলে লং অনে ক্যাচ দেন ২০ রান করেই। এরপর ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিয়েছেন পার্টটাইমার ফিলিপ্স। ৪১তম ওভার করতে এসে প্রথম বলেই তুলে নেন জো রুটকে, রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট প্যাডের ফাঁক বলে বোল্ড হয়ে যান রুট। থেমে যেতে হয় ৭৭ রানেই। এরপর ক্রিস ওকস, স্যাম কারান ফিরে যান দ্রুত। শেষ দিকে ক্রিস ওকস, আদিল রশিদদের কল্যাণে ইংল্যান্ড পেয়েছে ভালো একটা সংগ্রহ। ম্যাট হ্যানরি ৪৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সেরা বোলার।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.