রুগ্ন কোম্পানির কর্ণধারের শত কোটি টাকার বিয়ে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একাধিক রুগ্ন কোম্পানির কর্ণধার ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী জাভেদ অফগ্যানহাফেন বিয়ে করেছেন। তার বিয়েতে বয়ে গেছে জৌলুসের নহর। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দুটি ভাগে বিয়ে ও সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন হারপারসবাজার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

গত শুক্রবার ও শনিবার (৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর) প্যারিসের অপেরা গার্নিয়ার ও পার্ক ডি বাগাটেলি নামের যে দুটি ভেন্যুতে জাভেদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, সে দুটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ভেন্যু।

এদিকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাভেদের বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, এসব অনুষ্ঠানে নাকি শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

হারপারসবাজারের খবর অনুসারে, জাভেদ অফগ্যানহাফেনের স্ত্রীর নাম রোজেমিন মাধবজি। দুবাইতে বসবাসরত রোজেমিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও উদ্যোক্তা।

জাভেদ অফগ্যানহাফেন ও রোজেমিন মাধবজির বিয়ের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে অতিথিরা অংশ নেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত ও বাংলাদেশ থেকে পলাতক ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ বাংলাদেশের অনেকেই ছিলেন।

জাভেদ অফগ্যানহাফেন দেশের একজন বিতর্কিত উদ্যোক্তা। শেয়ারবাজারে নানা কারসাজি, জালিয়াতিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক ঘটনায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তার নিজের ও কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

জাভেদ অফগ্যানহাফেন ও তার স্ত্রী রোসেমিন মাধবজি (মাঝখানে)। পাশে দুবাইয়ের ফ্যাশন ডিজাইনার লিনা দেরাওয়ান

হারপারবাজারেরের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুবাই-ভিত্তিক কন্টেন্ট নির্মাতা ও উদ্যোক্তা রোসেমিন মাধবজি এবং বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জাভেদ অফগ্যানহাফেন বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় একটি বিশাল দক্ষিণ-এশীয় স্টাইল পার্টির মাধ্যমে তাদের প্রেম উদযাপন করেছেন।

নতুন এই দম্পতি আয়োজনকে দুটি জমকালো ইভেন্টে ভাগ করেছিলো। প্রথমটি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি পরের দিন শনিবার রাতে প্যারিসের একটি বাগানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরও বলা হয়, এই দম্পতির প্রেম উদযাপন করতে সারা বিশ্ব থেকে অতিথিরা এসেছিলেন। তাদেরকে দক্ষিণ-এশীয় সেরা পোশাকে সজ্জিত করা হয়। অনেকেই মনীশ মালহোত্রা এবং ফারাজ মাননের মতো বিখ্যাত ভারতীয় ডিজাইনারদের পোশাক পড়েছিলেন।

এছাড়াও দুবাই-ভিত্তিক প্রভাবশালী ফ্যাশন ডিজাইনার লিনা ডেরাওয়ান ইনস্টাগ্রামে বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করেন। অপরদিকে সিরিয়ার উদ্যোক্তা এবং লা লোজ বিউটি সেলুনের প্রতিষ্ঠাতা রিম খাব্বাজেহ তার স্বামীর সাথে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি লুই ভিটন ব্যাগের সাথে একটি কালো কেপ পোষাক পরেছিলেন। এদিন তিনি ইনস্টাগ্রামে সুন্দর সাজসজ্জার ছবি শেয়ার করেছেন

এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা বিয়ের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। দুইদিনের জমকালো অনুষ্ঠানে শিল্পী, ব্যবসায়ী, ড্যান্সার. আর্টিস্ট সহ অনেকেই যোগদান করেন।

উল্লেখ, জাভেদ অফগ্যানহাফেন পুঁজিবাজারে তঅলিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান। খুবই দুর্বল এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২০১৫ সালেও ছিল মাত্র ১০ কোটি টাকা। পরের বছর এর মূলধন দেখানো হয় ২১০ কোটি টাকা। প্লেসমেন্টে নামে-বেনামে শেয়ার ইস্যু করে পরবর্তীতে ওই শেয়ার উচ্চ দামে বিক্রি করে কয়েকশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ২০২০ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট ইস্যু করা ১ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ওই শেয়ার ফ্রিজ করে দেয়।

জাভেদ অফগ্যানহাফেন পরবর্তীতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফুওয়াং সিরামিক অধিগ্রহণ করেন। আর এই অধিগ্রহণের সময়ও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়।

জাভেদ অফগ্যানহাফেনের বিয়ের অনুষ্ঠানে সেলিব্রেটিদের একাংশ

জাভেদ অফগ্যানহাফেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ কোম্পানিটির বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

জাভেদের নিয়ন্ত্রনাধীন তিনটি কোম্পানির মধ্যে এসএস স্টিল ও ফু-ওয়াং সিরামিক সর্বশেষ বছরের জন্য ২ শতাংশ হারে এবং জেনারেশন নেক্সট ১ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে। জেনারেশন নেক্সট আগের তিন বছরে শেযারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশই দেয়নি।

এমন দুর্বল ও রুগ্ন কোম্পানির কর্ণধার জাভেদের এত জৌলুসময় বিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বছরের ১২ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও জাভেদ অফগ্যানহাফেন ওই বিলাসবহুল বিয়ের অনুষ্ঠানের অর্থ কীভাবে নিয়ে গেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি তিনটিকে ব্যবহার করে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল এই অর্থ পাচার করা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য জাভেদ অফগ্যানহাফেনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এসএস স্টিলের কোম্পানি সচিবের কাছে কোম্পানির চেয়ারম্যান জাভেদ অফগ্যানহাফেনের বিয়ে ও প্যারিসে বিলাসবহুল অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অর্থসূচককে বলেন, এটি উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.