২ বছরের শিশুকে ফেরাতে জার্মানিকে ভারতের চাপ

সাত মাস বয়সে আরিহা শাহ নামের ভারতীয় এক শিশুকন্যাকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেয় বার্লিনের কর্তৃপক্ষ৷ প্রায় দুই বছর জার্মানির সামাজিক সুরক্ষা সেবার অধীনে থাকা শিশুটিকে ভারতে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছে ভারত৷

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আরিহা তার দাদী বা নানীর মাধ্যমে আহত হওয়ার পর বার্লিন কর্তৃপক্ষ তাকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে৷ সাত মাস বয়সের সেই আরিহার বয়স এখন দুই বছরের বেশি৷ ২০ মাস ধরে জার্মান সামাজিক সুরক্ষার অধীনে পালক বাবা-মায়ের কাছে আছে সে৷ আর তার জন্মদাতা বাবা-মা এখন আছেন মুম্বইয়ে৷

বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ভারতের সরকার৷ ঘটনাটি দিল্লি ও বার্লিনের মধ্যে কূটনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে৷ ডিসেম্বরে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের ভারত সফরের সময় প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এই প্রসঙ্গে অনেকের মনে পড়ছে বাঙালি কন্যা সাগরিকা চট্টোপাধ্যায়ের কথা৷ দুই বছর আইনি লড়াইয়ের পর নরওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সন্তানদের ফিরে পান তিনি। সাগরিকার জীবনের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’৷ ১৭ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত সিনেমাটি৷ ছবিতে দুই সন্তানের মা দেবিকা চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রানি।

চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছিল স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে ভিন্‌দেশে সংসার দেবিকার। চাকরিসূত্রে নরওয়েবাসী দেবিকার স্বামী৷ দুই সন্তানকে নিয়ে হাসিখুশি সংসারে এক দিন নেমে আসে বিপদ৷ দেবিকার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তার দুই সন্তানকে। নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে লড়াই শুরু করেন দেবিকা চট্টোপাধ্যায় তথা ‘মিসেস চ্যাটার্জি’৷

আরিহার প্রসঙ্গে আবারও এই চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন অনেকে৷ সামাজিক মাধ্যমে ‘রিটার্ন আরিহা’ নামে একটি হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডও চলছে৷

হিন্দুস্তান টাইমস ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, বার্লিনে ভারতীয় দূতাবাস ‘আরিহা শাহকে ভারতে ফেরাতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷’

অরিন্দম বাবু বলেন, ‘আরিহা শাহ একজন ভারতীয় নাগরিক।শিশুটির জাতীয়তা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক পটভূমি ঠিক করবে তাকে লালনপালনের জন্য কোথায়, কোন কেয়ারে রাখা যেতে পারে৷ আমরা জার্মান কর্তৃপক্ষকে আরিহাকে ভারতে পাঠানোর জন্য যা যা করা দরকার সেই ব্য়বস্থা নিতে অনুরোধ করছি৷ ভারতীয় নাগরিক হিসাবে এটা তার অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ শিশুকন্যাটির সর্বোত্তম স্বার্থ “শুধুমাত্র তখনই বোঝা সম্ভব যখন সে নিজের দেশে থাকবে, যেখানে তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষা করা যেতে পারে৷’

নয়াদিল্লি বারবার জার্মান কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে বলেছে, ‘তার সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত পটভূমির সঙ্গে যেন আরিহার সংযোগে কোনো আপোস না করা হয়৷’

অরিন্দম বাবু হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শিশুকন্যাটিকে জার্মানির একটি সেবাকেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তার মতে, শিশুটির মানসিক বিকাশের জন্য এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷

ভারতীয় গণমাধ্যম শুক্রবার জানিয়েছে, ১৯টি রাজনৈতিক দলের ৫৯ জন ভারতীয় সাংসদ মেয়েটির হেফাজত নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ আকেরমানকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন৷

রাজনীতিবিদরা তাদের চিঠিতে লিখেছেন, ‘পার্লামেন্টের সদস্য হিসাবে, নাগরিকদের কল্যাণের জন্য আমাদের একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে৷ ভারতে জার্মানির প্রতিনিধি হিসাবে জার্মান কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানাতে অনুরোধ করছি৷ আরিহাকে বাড়িতে আনতে সাহায্য করার জন্য যা যা প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি৷’

বার্লিনে কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরিহা শাহকে তার বাবা-মায়ের থেকে আলাদা করে৷ ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল তার নানী বা দাদী৷ তার মাধ্যমে শিশুটি আচমকা চোট পায়। বাবা-মা আরিহাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সতর্কতা জারি করা হয়৷ পরে তাকে জার্মানির যুব কল্যাণ দপ্তরের অফিসের হেফাজতে রাখা হয়৷

প্রথমে শিশুকন্যাটির বাবামায়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হলেও পরে তা তুলে নেয়া হয়৷ এর মধ্যে আরিহাকে আর তার বাবা-মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে মেয়েটির বাবা-মা জানায়, ১৫-২০ দিন পরপর সন্তানের সঙ্গে তাদের দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল৷ জার্মানিতে কর্মরত মেয়েটির বাবা ও তার মা পরে মুম্বইয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসেন৷

ডিসেম্বরে ভারত সফরের সময়, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, শিশুটি ভাল আছে এবং তার ‘সুস্থতা প্রথম অগ্রাধিকার’৷ তিনি বলেন, জার্মানি ‘‘প্রত্যেক শিশুর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের কথা মাথায় রাখে৷ জার্মানির যুব অফিস তাদের প্রয়োজনীয় যত্ন নেয়৷”

বার্লিন চাইল্ড সার্ভিসেস সন্তানের উপর পিতামাতার অধিকার তুলে নিতে একটি সিভিল কাস্টডি মামলা দায়ের করেছে৷

জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব মেলেনি৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.