রোজায় গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে মুক্তি পাবেন যেভাবে

গ্যাস্ট্রিক বা Gastritis কিংবা Gastric, নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের মাঝে প্রায়ই নানা রকম বিড়ম্বনা দেখা যায়। রমজান মাসে এ সমস্যা যেন আরও বিকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত খাদ্যাভ্যাসের জন্যই মানুষ রোজায় গ্যাস নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন।

‘অটোফেজি’ নিয়ে সবাই শুনে থাকবেন। এই শব্দটি এসেছেই দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার প্রক্রিয়া থেকে। টোকিওর গবেষক এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান। অটোফেজি প্রক্রিয়াটি আমাদের শরীরকে কার্যক্ষম রাখে, দুর্বল অঙ্গাণু থেকে মুক্তি দেয় এবং ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে। এক কথায় বলা যায়, অটোফেজি রোগ প্রতিরোধ করে এবং আমাদের যৌবন ধরে রাখতে সহায়তা করে। তাহলে আমরা যে এক মাস সিয়াম সাধনা করছি, সেক্ষেত্রে আমাদের উল্টো ভালো থাকার কথা। তার মানে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আমাদের অত্যন্ত জরুরী। ছোট ছোট পদক্ষেপ কিন্তু খুব সহজ। কিছু খাদ্য আপনার নিত্যদিনের খাবারের টেবিলে রাখলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।

গ্যাস্ট্রিকের রোগ হতে পারে নির্দিষ্ট কোন ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় যেমন- পেইন কিলার, স্ট্রেস, স্মোকিং, চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া এবং কখনো কখনো ইনফেকশনের কারণেও হয় যেমন— H-Pylori ইনফেকশনের জন্য।

আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ। দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেলে তাদের ভবিষ্যতে আয়রন, ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা দেবে। এমনকি হাড় ক্ষয়, অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা সেই সঙ্গে শরীরে কিছু রোগজীবাণু প্রবেশের সক্ষমতা বেড়ে যায়। এমনকি কিডনিতে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক খাদ্যাভাস ও সাথে শরীরচর্চা আপনাকে Gastritis থেকে দেবে স্বস্তি।

কীভাবে বুঝবেন আপনি Gastritis রোগে আক্রান্ত

১. পেটে ব্যাথা

২. পেটে বদ্ধ অনুভূতি

৩. পেট ফুলে যাওয়া

৪. খাওয়ার ইচ্ছা লোপ

৫. ঢেকুরের সঙ্গে টক বা অম্ল জাতীয় পানি বের হওয়া

খাদ্যাভ্যাসে খুব সামান্য পরিবর্তনে এ সমস্যা থেকে স্বস্তি পাওয়া সম্ভব-

১. প্রথমেই লেবুর শরবত দিয়ে ইফতার শুরু করবেন না। শুরুতে পানি দিয়ে শুরু করুন। তারপর চিনি ছাড়া অথবা খুবই অল্প পরিমাণ চিনিযুক্ত শরবত, বাঙ্গি, তরমুজ বা বেলের শরবত খেতে পারেন। তাছাড়া পানি ও সাদা মুড়ি দিয়েও শুরু করতে পারেন।

২. বেশি করে খোসাসহ শসা খাবেন, কারণ শসার ৯৫ ভাগ পানি যা সারাদিনের শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে শীতল করতে সাহায্য করে। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।

৩. খাবারের তালিকায় পেঁপে রাখতে পারেন। কারণ, পেঁপের ভেতর রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয়।

৪. দই-চিড়া-কলা গাস্ট্রিকের সমস্যা নিরসনে এক অসাধারণ খাবার। দই ও কলা হজমে সাহায্য করে।

৫. তরমুজে রয়েছে পটাশিয়াম যা গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে তরমুজে থাকা ৯২ শতাংশ পানি দেহের পানিশূন্যতা দূর করতে দারুণ ভূমিকা রাখে।

৬. ইফতারের শুরুতেই একবারে বেশি পানি না খেয়ে, একটু গলা ভিজিয়ে ২টি খেজুর খান- নামাজ পড়ে বাকি খাবার গ্রহণ করুন। এতে করে অস্থিরতা কাজ করবে না, গ্যাসও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।

আঁশ জাতীয় ফল আর সবজি বেশি করে খান। আঁশ রয়েছে এমন খাবারগুলো হল-

১. পেয়ারা- প্রতি ১০০ গ্রামে ৫.৪ গ্রাম

২. আমড়া- প্রতি ১০০ গ্রামে ৫.৭ গ্রাম

৩. ঢেড়স- প্রতি ১০০ গ্রামে আশ ৩.২ গ্রাম

৪. বেগুন- প্রতি ১০০ গ্রামে ৩ গ্রাম

৫. সজনে- প্রতি ১০০ গ্রামে ৪.৮ গ্রাম

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.