বেক্সিমকোর সুকুক প্রকল্পের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ!

আ'লীগ নেতা হারুন প্রধান আটক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে শত কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের জন্য বেক্সিমকো পঞ্চগড়ে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হারুনুর রশিদ ওরফে হারুন প্রধান ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে এ জমি কেনা হয়। হারুন প্রধান বাস্তবে জমি না কিনে জাল দলিল দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বেক্সিমকো থেকে ওই টাকা হাতিয়ে নেয়।

বেক্সিমকো লিমিটেড ক্রয়কৃত জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য হারুন প্রধানকে চাপ দিলে সে নানা টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়।

পঞ্চগড় থেকে অর্থসূচক প্রতিনিধি ডিজের হোসেন বাদশার পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বেক্সিমকো লিমিটেড পঞ্চগড়ে সৌর বিদ্যুতের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পুঁজিবাজারে সুকুক নামের ইসলামী বন্ড ইস্যু করে সংগৃহীত তিন হাজার কোটি টাকার একটি অংশ এই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হচ্ছে। একটি প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও অংশগ্রহণ রয়েছে।

জানা গেছে, বেক্সিমকো লিমিটেড তাদের কোম্পানির সাথে প্রতারনা ও টাকা উদ্ধারে প্রাথমিক পর্যায়ে একটি প্রজেক্টের পক্ষে ঢাকায় ধানমন্ডি থানায় ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি মডেল থানায় বাবর মিয়াকে (৬০) প্রধান ও হারুন অর রশিদ প্রধানকে (৫৫) দ্বিতীয় করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে এ মামলা করেন বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড এর ডেপুটি ম্যানেজার আল মামুন।

দুটি প্রজেক্টের মধ্যে প্রথম মামলায় একটি প্রজেক্টে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেডের ৪৬ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা আত্নসাৎ করার মামলার দ্বিতীয় আসামী হারুন অর রশিদ প্রধান ওরফে হারুন প্রধানকে পঞ্চগড় থেকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।

মামলার খবরে হারুণ প্রধানসহ সকল আসামী আত্মগোপনে চলে যান। তখন থেকে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান পরিচলানা করছে। এর মাঝে মামলার দ্বিতীয় আসামী হারুন প্রধানকে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকার ডিবি পুলিশ পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়ন থেকে আটক করে।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনি জানান, আটকের পর তেঁতুলিয়া মডেল থানায় অবগত করে তাকে ঢাকায় নিয়েছে ডিবি পুলিশ।

এজাহার ভুক্ত আসামী হারুন অর রশিদ প্রধান জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের সাতমেড়া বাসামোড় এলাকার মৃত গফুর উদ্দীন প্রধানের ছেলে।

হারুন প্রধানকে আটক করে গাড়িতে তুলছে ডিবি

একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হারুন প্রধানসহ অপর অভিযুক্তরা ১১৫ একর ২৪ শতাংশ জমি বিভিন্ন ভূয়া ও জাল জালিয়াত দলিলের মাধ্যমে কোম্পানীর নামে ক্রয়ের কথা বলে ওসমান কায়সার চৌধুরী এবং বিভিন্ন মানুষের নামে ১১৪ টি ভূয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এবং করতোয়া সোলার লিমিটেড এর নামে ৩১ টি ভূয়া সাব-কবলা দলিলের রেজিস্ট্রি দেখিয়ে, ১৬.০০ একর জমি কোম্পানীকে বুঝিয়ে দেয়। এবং প্রতারণামূলকভাবে তারা তাদের নামে বেনামে এবং তাদের বিভিন্ন কোম্পানী ও ফার্মের নামে বাদীর সংশ্লিষ্ট কোম্পানী থেকে ৪৬ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে বলে জানা যায়। অপর আসামীদের আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে ২য় প্রকল্পের জন্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক বিনিয়োগ বিদেশ থেকে হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতা এর জন্যে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ কারীদের নিকট বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় সরাসরি ২য় প্রকল্পের নামে কোনো প্রকার মামলা করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদেশী প্রকল্পের পক্ষে বেক্সিমকো আলাদা মামলার কথা ভাবছে। সেই প্রকল্পের স্বার্থে স্থানীয় প্রতারক হারুন প্রধান সহ তার সহযোগী, দলবল ও ভুয়া দলিল তৈরী, রেজিস্ট্রি কাজে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগে মোট ১৯২ টি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি মামলা করা হয়েছে। বাকি ১৯১ টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

স্থানীয়দের পক্ষ থেকেও ভয়-ভীতি দেখানো, জমি জবর দখল ও প্রতারনাসহ নানা অভিযোগে হারুন প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে হারুন প্রধানকে আটক খবরে মিষ্টি বিতরণ করেছে তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের মাগুরমাড়ি চৌরাস্তা এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায়। হারুন প্রধান নিজেকে ওসির ভাই ও আ’লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় বিভিন্নজনের পৈত্রিক জমি জবর দখল করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মুকু জানান, কোম্পানির জন্য জমি ক্রয় করে দেয়ার নামে দীর্ঘদিন যাবৎ বেক্সিমকো কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল হারুন প্রধান। এমনকি তার হাত থেকে স্থানীয়রাও রক্ষা পায় নি। তার এসব কর্মকাণ্ড ও ও প্রতারণায় এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠে। তার আটকের খবরে তাই স্থানীয়রা মিলে আমরা আনন্দে মিষ্টি মুখ করেছি।

এ বিষয়ে বেক্সিমকোর বক্তব্য জানতে কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ আসাদউল্লাহকে ফোন করা হলে অর্থসূচককে বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

বেক্সিমকো গ্রুপের গণসংযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট পিআর আজ দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে কোম্পানির (বেক্সিমকো) হয়ে অর্থসূূচককে একটি বক্তব্য দিয়েছে। ইমপ্যাক্ট পিআর-এর ভাষ্য অনুসারে, বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন পঞ্চগড়ে জমি কেনা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। কোম্পানির কাছে বিষয়টি ধরা পড়ার পরপরই তারা আইনের শরনাপন্ন হয়েছেন। ইতোমধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইন অনুসারে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে। তারা কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

(প্রিয় পাঠক, এই সংবাদটির বিষয়ে বেক্সিমকোর বক্তব্য জানতে গত শনিবার (২৫ মার্চ) ইমপ্যাক্ট পিআর-এর সাথে যোগাযোগ করেছিল অর্থসূচক। সোমবার সকাল পর্যন্ত কোনো বক্তব্য না পাওয়ায় সকাল ১১টা ৪ মিনিটে নিউজটি পাবলিশ করা হয়। তবে ইমপ্যাক্টের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিয়ে দেওয়ার জন্য একটু সময় চাওয়া হলে নিউজটি কিছু সময়ের জন্য আনপাবলিশ করে রাখা হয়। দুপুর সোয়া ২টায় তারা বেক্সিমকোর ভাষ্য জানানোর পর এটি আবার পাবলিশ করা হল।)

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.