বইমেলা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেছেন। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার সাথে ছিলেন জাতির পিতার আরেক কন্যা শেখ রেহানা।

এছাড়া, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনসহ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্মকে যত বেশি সাহিত্যের দিকে আনতে পারবো, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির দিকে আনা যাবে, তারা ততোটা সৃজনশীল হবে। মাদক ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকবে। এখন সবাই বই পড়তে চাই না, তাই অডিওর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যদিও বই পড়ার তৃপ্তি আলাদা। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের যত বই বের হবে, সবগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। তাহলেই সারাবিশ্ব আমাদের কথা জানবে। সারাদেশে কালচারাল সেন্টার করা হয়েছে। আমরা জেলায় জেলায় বইমেলা করছি। এভাবে আমাদের বিভিন্ন দেশেও বইমেলা করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কূটনৈতিকদের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাটা করা প্রয়োজন। এতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

এবার বইমেলায় নতুন পুরনো মিলিয়ে ১৩৬টি বই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। তার মধ্যে বইমেলার প্রথম দিনে ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলী’, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘আমার দেখা নয়াচীন-পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘কারাগারের রোজনামচা-পাঠ বিশ্লেষণ’, হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ এর ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য লেটার অব সাবিত্রী’-র মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে এবছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ততের পুরস্কার প্রদান করা হয়। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ পান ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যাক্তি। তারা হলেন, কবিতায় ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত, কথাসাহিত্যে তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণায় মাসুদুজ্জামান, অনুবাদে আলম খোরশেদ, নাটকে মিলন কান্তি দে ও ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশুসাহিত্যে ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশবিজ্ঞানে মোকারম হোসেন, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনিতে ইকতিয়ার চৌধুরী এবং ফোকলোরে পুরস্কার পেয়েছেন আবদুল খালেক ও মুহম্মদ আবদুল জলিল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন, মানবসম্পদ ও পরিকল্পনা বিভাগ) এবং বইমেলার সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে। তবে দর্শক ক্রেতা ও পাঠকরা রাত সাড়ে ৮টার পরে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবেন না। সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরে খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে।

এবার বইমেলার আয়তন হচ্ছে সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট৷ এবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি স্টল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। লিটলম্যাগ চত্বরে ঠাঁই পাবে ১৫৩টি স্টল।

বইমেলা চলাকালীন মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় এবার বইমেলায় প্রবেশের গেইটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। টিএসসি গেইট, রমনা কালীমন্দির ও দোয়েল চত্বরে তিনটি প্রবেশপথ রাখা হয়েছে। পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে এবার কোনো প্রবেশ গেইট নির্মাণ করা হবে না। বইমেলায় আগত দর্শক-পাঠক ও ক্রেতাদের দোয়েল চত্বর হয়ে প্রবেশ করতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.