শিল্প উদ্যোক্তাদের সুদে বিশাল ছাড় দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

বিশ্বব্যাংকের আর্থিক খাত সহায়তা প্রকল্পের (এফএসএসপি) আওতায় বেসরকারি খাতের উৎপাদনমুখী শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের সুদহারে বিশাল ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, এফএসএসপি প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘমেয়াী ফাইনান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) ঋণ গ্রহীতাদের সুদের ক্ষেত্রে লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট (লাইবর) আর কার্যকর থাকছে না। মূলত লাইবর রেটের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এই খাতের উদ্যোক্তাদের বিশাল ছাড় দিতে সুদ আরোপে লাইবরের সঙ্গে যুক্ত সুদহারের সমন্বয় তুলে নিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন উদ্যোক্তাদের ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদী ঋণের বিপরীতে ৩ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদ দিতে হবে। আর আগের নিয়মে সুদের হার ছিল লাইবর রেটের সঙ্গে বাড়তি ২ থেকে ৩ শতাংশ। সেই হিসাবে চলমান ঋণের সুদ (গতকালের লাইবর রেট হিসাবে ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং বাড়তি সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ) দাঁড়ায় প্রায় ৮ শতাংশ। সব মিলে উদ্যোক্তারা এখন আগের থেকে অর্ধেকেরও কম সুদ দিবেন যা চলতি বছরের জানুয়ারির ১ থেকে থেকে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এই নির্দেশনা অনুযায়ী, যে ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং মান যতো ভালো তারা ততো কম সুদে ঋণ দিতে পারে। আর শুধুমাত্র ১,২ ও ৩ রেটিং মান পাওয়া ব্যাংকগুলে এফএসএসপি থেকে ঋণের জন্য অর্থ নিতে পারে। ক্যামেলস রেটিংয়ে মান-১ পাওয়া ব্যাংকগুলো এখন পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ বিতরণ করবে ৩ শতাংশ সুদের। যা আগে ছিল লাইবর রেট (৫ দশমিক ১৪ শতাংশ) ও যোগ ২ শতাংশ। সাত বছর মেয়াদি ঋণ দিবে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদহারে। যা আগে ছিল লাইবর যোগ ২ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ। ১০ বছরর অধিক মেয়াদি ঋণের সুদ হবে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে। যা আগে ছিল লাইবর যোগ ২ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে।

একইভাবে ক্যামেলস রেটিংয়ে মান-২ এর অন্তর্ভুক্ত ব্যাংকগুলো এখন পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ বিতরণ করবে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদের হারে। যা আগে ছিল লাইবর রেট (৫ দশমিক ১৪ শতাংশ) ও ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সাত বছর মেয়াদি ঋণের সুদ হবে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। যা আগে ছিল লাইবর যোগ ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১০ বছরর অধিক মেয়াদি ঋণের সুদ হবে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা আগে ছিল লাইবর যোগ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে।

অন্যদিকে ক্যামেলস রেটিংয়ে মান-৩ ব্যাংকগুলো এখন পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ বিতরণ করবে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদের হারে। যা আগে ছিল লাইবর রেট (৫ দশমিক ১৪ শতাংশ) ও যোগ ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। সাত বছর মেয়াদি ঋণের সুদ হবে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা আগে ছিল লাইবর যোগ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ১০ বছরর অধিক মেয়াদি ঋণের সুদ হবে ৪ দশমিক শূন্য শতাংশ হারে। যা আগে ছিল লাইবর যোগ ৩ দশমিক শূন্য শতাংশ।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গঠিত ২৯ কোটি ২৫ লাখ ডলারের ঘূর্ণমান তহবিলের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে বিশ্বব্যাংক জোগান দিয়েছে ২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এখান থেকে ব্যাংকগুলো অর্থ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রায় সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে ঋণ দিতে পারে।

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.