ব্রাজিলকে হারিয়ে ক্যামেরুনের বিদায়

ছোট আর বড় সবাই এক কাতারে! এটাই যেন কাতার বিশ্বকাপের মূলমন্ত্র, বড় আর ছোটতে নেই কোনো ভেদাভেদ। লুসাইল স্টেডিয়ামে যোগ করা সময়ে ভিনসেন্ট আবু বকরের গোলে ক্যামেরুন ১-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিলকে।

এবারই প্রথম আফ্রিকা মহাদেশের কোনো দল বিশ্বকাপে হারাতে পারলো ব্রাজিলকে৷ জি গ্রুপের অন্য ম্যাচে সুইজারল্যান্ড ৩-২ গোলে হারিয়েছে সার্বিয়াকে। হারলেও গোল গড়ে এগিয়ে থেকে ‘জি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় পা রেখেছে ব্রাজিল, সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া। গ্রুপ রানার্স আপ সুইজারল্যান্ড খেলবে পর্তুগালের বিপক্ষে।

ক্যামেরুনের বিপক্ষে রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি পরখ করেছেন তিতে, ঠিক যেমনটা করেছিলেন দিদিয়ের দেশম তিউনিসিয়ার বিপক্ষে। দুই দলেরই হয়েছে একই পরিণতি। গোলের অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েও গোল করতে পারেননি ব্রাজিলের মূল একাদশের বাইরে থাকা ফুটবলাররা। অন্যদিকে যোগ করা সময়ে (৯২তম মিনিটে) ক্যামেরুনের দারুণ কাউন্টার অ্যাটাকে হেড করে গোল করেন ভিনসেন্ট আবু বকর। এই বিশ্বকাপে তার তৃতীয় গোল। ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করার আনন্দ জার্সি খুলে উদযাপন করায় লাল কার্ড দেখতে হয় তাকে, কারণ, আগেই একটা হলুদ কার্ড দেখেছিলেন এই স্ট্রাইকার।

সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচের একাদশে ৯ পরিবর্তন এনে ক্যামেরুনের বিপক্ষে দল সাজান ব্রাজিলের কোচ তিতে। এদের মিলিতাও ও ফ্রেদ বাদে আগের ম্যাচের শুরুর একাদশের কাউকেই তিতে শুরু থেকে রাখেননি৷ গ্রুপ পর্ব উৎরে যাওয়া নিশ্চিত হওয়াতেই এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অবশ্য একই কাজ করে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে হেরে গিয়েছিল ফ্রান্স, তাতেও দমে যাননি তিতে। উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট, বিশ্বকাপ জয়ের অগ্রযাত্রায় প্রতিটা সৈনিককেই তিনি চাইছেন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত অবস্থায়।

অনেকটা চমক হিসেবেই দানি আলভেস এসেছেন ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে। থিয়াগো সিলভার বদলে অধিনায়ক হিসেবে এই রাইট-ব্যাক। ৩৯ বছর ২১০ দিন বয়সে মাঠে নেমে ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি বয়সি খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড গড়েছেন দানি আলভেস, সেই সঙ্গে হয়ে গেছেন সবচেয়ে বয়স্ক অধিনায়কও।

১৪ মিনিটে ফ্রেদের ক্রস থেকে গাব্রিয়েল মার্তিনেলি হেড থেকে গোল করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কর্নারের বিনিময়ে তার হেড বাঁচান ক্যামেরুনের গোলরক্ষক ডেভিস এপাসি। নিয়মিত গোলরক্ষক ওনানা’র জায়গায় তাকে দলে নিয়েছেন কোচ রিগোবার্ট সং, শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দেশে ফের‍ত পাঠানো হয়েছে ওনানাকে। ২২ মিনিটের সময় ফ্রেদ বক্সের ভেতরে ভলিতে গোলের প্রচেষ্টা নিলেও তার শট যায় বারের উপর দিয়ে। ৩০ মিনিটে রদরিগোর ফ্রি-কিক ফিরে আসে মানবপ্রাচীরে লেগে। মিনিট চারেক পর সম্ভাবনাময় জায়গায় ফ্রি-কিক পেয়েও দানি আলভেস মেরেছেন বারের উপর দিয়ে। ৩৮ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে বক্সে ঢুকে নেয়া অ্যান্টনির শটটাও আটকে দেন গোলরক্ষক। বিরতির ঠিক আগে আগে মার্তিনেলির জোরাল শটও কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন এপাসি।সেই কর্নার থেকে তৈরি হওয়া

গোলকিকের পর ক্যামেরুন পেয়েছিল দারুণ এক সুযোগ। ব্রায়ান এমবুমোর হেডটা ডানদিকে পুরো শরীর বাড়িয়ে বাঁচান এদেরসন। সেটাই ছিল এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলপোস্টে প্রথম কোনো গোলের সম্ভাবনা। অন্যদিকে প্রথমার্ধে ১০ বার গোলের প্রচেষ্টা নিয়েছিল ব্রাজিল, যার ৭টাই ছিল অন টার্গেট। কিন্তু সাফল্য আসেনি একবারও।

দ্বিতীয়ার্ধের মিনিট দশেকে গোলের দেখা না পেয়ে একসঙ্গে তিন খেলোয়াড় বদল করেন তিতে। অ্যালেক্স তেলাম,রদরিগো আর ফ্রেদকে তুলে ব্রুনো গুইমারেস, এভারটন রিবেইরো আর মারকুইনহোসকে নামান ব্রাজিল কোচ। বদলের মিনিট খানেকের মাথায় আরেকটা দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন মার্তিনেলি৷ কিন্তু তার শট কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান ক্যামেরুনের গোলরক্ষক। সেই কর্নার থেকে গোলমুখি শটে আবারও কর্নার। তবে পরের বার ক্লিয়ার করতে পারে ক্যামেরুন। যদিও এক মিনিট পর অ্যান্টনির বাম প্রান্ত থেকে নেয়া বাঁকানো শট আবারো কর্নারের বিনিময় বাঁচান এপাসি। একের পর এক আক্রমণেও গোল পাচ্ছিল না ব্রাজিল। সুযোগ এসেছে অনেক, কিন্তু আসেনি সাফল্য। ৮৩ মিনিটে রাফিনহার শটটাও চলে যায় পোস্টের পাশ ঘেঁষে। গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েও গোল করতে না পারা ব্রাজিলের এই ব্যর্থতার সুযোগেই পাল্টা আক্রমণে গোল করে জয় ছিনিয়ে নেয় ক্যামেরুন। বিশ্বকাপ থেকে ক্যামেরুন বিদায় নিচ্ছে ঠিকই, তবে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম দল হিসেবে ব্রাজিলকে হারাবার গৌরব।

৫৪ শতাংশ বলের দখল রেখে, গোলমুখে ২১ বার শট নিয়ে যার ৮টাই ছিল পোস্টে আর ১১টা কর্নার পেয়েও একটা গোলও করতে পারেনি ব্রাজিল। গোল হজমের পর শেষ বেলায় সমতা ফেরানোর দারুণ একটা সুযোগও পেয়েছিলেন মার্কুইনহোস, কিন্তু পারেননি বল জালে পাঠাতে। এমন নয় ক্যামেরুনের গোলরক্ষক খুব অসাধারণ কিছু সেভ করেছেন, নিয়মিত গোলরক্ষকের বদলে জায়গা পেয়ে ভালোই করেছেন এপাসি৷ তবে ব্যর্থতার দায়টা ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডদেরও কম নয়। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে তাদের বেশিরভাগ শট, পোস্ট অরক্ষিত দেখেও মেরেছেন বারের উপর দিয়ে।

কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হারের পর ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকা তিতের দলের জয়রথ থামলো সেই লুসাইল স্টেডিয়ামেই, যেখানে সৌদি আরবের বিপক্ষে থেমেছিল আর্জেন্টিনারও জয়রথ।

ব্রাজিলের শেষ ষোলোয় যাওয়াটা অনেকটা নিশ্চিতই ছিল প্রথম দুই ম্যাচে পাওয়া জয়ে। সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডের জন্য ম্যাচটা ছিল নকআউট, যে হারবে তাকেই ধরতে হবে ফেরার ফ্লাইট আর জয়ী দল যাবে পরের রাউন্ডে। ম্যাচের ২০ মিনিটেই জারদান শাকিরির গোলে এগিয়ে যায় সুইসরা, কিন্তু ম্যাচের ২৬ ও ৩৫ মিনিটে আলেক্সান্ডার মিত্রোভিচ ও দুশান ভ্লাহোভিচের গোলে সুইসদের পেছনে ফেলে সার্বিয়া। বিরতির ঠিক আগে ব্রিল এমবোলোর গোলে সমতা ফেরায় সুইজারল্যান্ড আর খেলার মধ্যবিরতিতে ২-২ সমতা। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনা ম্যাচের পর এই প্রথম দুই দলই প্রথমার্ধে অন্তত দুটো করে গোল করলো। বিরতির পর খেলা শুরুর তিন মিনিটের মাথায় রেমো ফ্রুয়েলারের গোলে এগিয়ে যায় সুইসরা, এরপর আর তারা ধরে ফেলতে বা এগিয়ে যেতে দেয়নি সার্বিয়ানদের। ৩-২ গোলে জিতে শেষ ষোলোয় পা রাখলো সুইজারল্যান্ড, ৭ ডিসেম্বর নকআউটের প্রথম পর্বে তাদের প্রতিপক্ষ পর্তুগাল। সূত্র: ডিডাব্লিউ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.