একদিনে বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ৪২ কোটি টাকা হাওয়া!

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয় মুনাফা তথা লাভের আশায়। বিশেষ করে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) শেয়ার বরাদ্দ পেলে, তাতে কম-বেশি মুনাফা পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। গত ৫ বছরে পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, তার একটি বাদে সব কোম্পানির আইপিওতে ভাল মুনাফা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে তাদের এই বদ্ধমুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছে বুধবার তালিকাভুক্ত হওয়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। লেনদেনের প্রথম দিনেই এই কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা লোকসানে পড়েছেন। তাদের বিনিয়োগ থেকে হাওয়া হয়ে গেছে ৪২ কোটি টাকা।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের লেনদেনের তথ্য-পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

বহুল আলোচিত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড আইপিও’র মাধ্যমে অভিহিত মূল্যে (Face Value) ১০ টাকা দরে ৪২ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার বিক্রি করে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা হয় ৪২৫ কোটি টাকা।

আজ বুধবার (১৬ নভেম্বর) দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে একযোগে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। আর প্রথম দিনেই শেয়ারটি ১০ শতাংশ বা এক টাকা দর হারায়। দিন শেষে এই শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৯ টাকা।

শেয়ার প্রতি এক টাকা দাম কমে যাওয়ায় ৪২ কোটি ৫০ লাখ শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়েছে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ বা মূলধন থেকে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাওয়া হয়ে গেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)  আজ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন শুরু শেয়ারটির অভিহিত মূল্যের চেয়ে ২০ পয়সা কমে তথা ৯ টাকা ৮০ পয়সা দরে। আর এটি-ই ছিল শেয়ারটির সর্বোচ্চ দাম। বেশিরভাগ শেয়ার কেনাবেচা হয় ৯ টাকা দরে। দিনের শেষ লেনদেনটিও একই দামে হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে কোনো আইপিওর শেয়ারের দাম প্রথম দিনেই অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে আসতে দেখা যায়নি। বরং বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম তালিকাভুক্তির পর থেকে টানা কয়েকদিনে ১০ শতাংশ করে বেড়েছে। এর মধ্যে নাভানা ফার্মার শেয়ারের দাম বেড়েছে টানা ৮ দিন। চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম টানা ১৩ দিন ধরে বাড়ছে। এমন অবস্থায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের এমন আচরণে হতাশ হয়েছেন এর বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষকদের অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, আইপিওর শেয়ারে বিনিয়োগ করা মানেই যে মুনাফার নিশ্চয়তা নয়, বিনিয়োগকারীদের সেটি বুঝা উচিত। এটি বুঝলে তারা যে কোনো কোম্পানির আইপিওতে অন্ধের মত বিনিয়োগ না করে কোম্পানির ভাল-মন্দ বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন। তাতে মন্দ বা দুর্বল কোম্পানির আইপিওর শেয়ার অবিক্রিত থাকলে (Under Subscribe) ওই আইপিও বাতিল হয়ে যাবে। তাতে ভাল কোম্পানি না হলে কেউ বাজারে আসার সাহস পাবে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উপরও চাপ কিছুটা কমে আসবে।

তবে তারা আইপিওতে আসার পর টানা শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতাকে অস্বাভাবিক মনে করেন। তাদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা, প্লেসমেন্টধারী ও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগারীর যোগসাজশে এমনটি ঘটছে। তাই দেখা যায়, আইপিওর তিন মাস বা ছয় মাসপরে একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম যেখানে থাকে, দুই বছর পর তার অর্ধেকও থাকে না। তখন সেকেন্ডারি বাজারের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.