‘ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ হতাশাজনক’

করোনা পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছিলো। এখন পর্যন্ত এই তহবিল থেকে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বিতরণ হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের।

শনিবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমইদের অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনা’ শীর্ষক কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে সেবা এবং উৎপাদনশীল খাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, ফলে পণ্যের উৎপাদন হ্রাসের মাধ্যমে পণ্যের দাম কমে আসবে এবং বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এসএমই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধিতে ব্যাংকসমূহের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ‘উপ-শাখা’ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণে জোর দেওয়া হচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পরিমাণ হ্রাস পাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯টি ক্লাস্টার নির্বাচন করে দিয়েছে। দেশের ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ওই ক্লাস্টারভুক্ত সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে এগিয়ে আসতে হবে।  করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরোপিত বিভিন্ন অবরোধের ফলে গোটা পৃথিবীর সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ঋণ প্রাপ্তির এ হার বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি এ এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করার ওপর দিতে হবে।

কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) মো. জাকের হোসেইন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার দুটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক জাকের হোসেইন বলেন, বর্তমানে আমাদের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান ২৫ % এবং ২০২৪ ও ২০২৭ সালে এটি যথাক্রমে ৩২ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এ খাতের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, বড় শিল্পখাতকে সহযোগিতা প্রদান এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদিও আর্থিক এবং নীতি সহায়তার অভাবে এ খাতের দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আর্থিক খতিয়ান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক নথিপত্রের ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের সিএমএস খাতের উদ্যোক্তারা প্রয়ই ব্যাংকের ঋণ সহায়তা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, ‘বিবিএস ইকোনোমিক সার্ভে ২০১৩’ অনুযায়ী দেশে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.