বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা

লোডশেডিং ও জ্বালানি সংকটের কারণে সেপ্টেম্বরে উৎপাদন কমেছে। এ সময় বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণের প্রয়োজনও কমেছে। এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে বকেয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এর আগের মাসেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। তবে এর আগের বছরের সেপ্টেম্বরে ঋণের স্থিতি ছিল ১২ লাখ ১০ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এক বছরে খাতটিতে বেসরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ দশমিক ১০ ভাগ। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২০২২ এ প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ ভাগ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে তা ছিল অনেক কম।

জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়েছিলো ১১ শতাংশ। পরের মাসে ফেব্রুয়ারিতে খাতটিতে প্রবৃদ্ধি কমে দাড়ায় ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে। এরপরে মার্চে সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে। এরপর ক্রমাগত বাড়তে থাকে ঋণ প্রবৃদ্ধি। জুলাই মাসে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সংকট সমাধানের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরপরেও রিজার্ভ সংকট কাটছে না। বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ডে হিসাব করলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে দাড়াবে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে। একই সঙ্গে কমেছে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কিন্তু এক বছর আগেও আমানত প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।

আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এসবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। দেশে ডলার সংকটে রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিক কমছে। এদিকে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিলো ২ লাখ ৮ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। নানা সংকটে দেশের অর্থনীতিতে শঙ্কা বাড়ছে।

লোডশেডিং ও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদনের পরিমাণ আগের তুলনায় কমেছে। এতে পণ্য আমদানির পরিমাণও কমেছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে এলসি খোলার পরিমাণ ৫৭০ কোটি ডলারে নেমেছে, যা এর আগের মাসেও ছিলো ৬৩৩ কোটি ডলারে। গত জুন মাসে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৮৪৪ কোটি ডলার, যা জুলাইতে ৬৩৫ কোটি ডলারে নামে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে। তাই খাতটিতে ঋণের পরিমাণও কমেছে। তবে এক বছরের তুলনায় ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা।

 

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.