ঝাপোরিজিয়ায় কি পরমাণু অস্ত্র তৈরি হচ্ছে?

ইউক্রেনের ঝাপোরিজ্ঝিয়া এখনো রাশিয়ার দখলে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও রাশিয়া ঘিরে রেখেছে। আর তা নিয়েই উঠছে নতুন প্রশ্ন।

গত রোববার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পশ্চিমা নেতাদের ফোন করে জানিয়েছিলেন, ইউক্রেন পরমাণু শক্তি ব্যবহার করে অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেন তা প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেন জানিয়েছিল, রাশিয়া আসলে নিজে এমন অস্ত্র প্রয়োগের কথা ভাবছে। সে কারণেই তারা রাতারাতি ইউক্রেনের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাশিয়া এবং ইউক্রেনের এই দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের অন্যতম কেন্দ্র ঝাপোরিজ্ঝিয়া। ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়া এই কেন্দ্রটি দখল করে। এবং তার পর থেকেই ইউক্রেন নানা অভিযোগ তুলেছে। রাশিয়া কেন্দ্রটি দখল করলেও ভিতরে ইউক্রেনের কর্মচারীরাই কাজ করছিলেন। সম্প্রতি রাশিয়া তাদেরকেও সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। ইউক্রেনের বক্তব্য, ওই পরমাণুকেন্দ্রে রাশিয়া গোপনে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করে অস্ত্র তৈরি করছে। আরো একটি জল্পনাও প্রকাশ পেয়েছে। কারখানায় ১৭৬টি ট্যাঙ্কে পরমাণু বর্জ্য আছে। সেই বর্জ্যে বিস্ফোরণ ঘটালে রেডিয়েশন এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। রাশিয়া সে বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করছে বলে ইউক্রেনের অভিযোগ।

এই বিতর্কের মধ্যেই মুখ খুলেছেন রাশিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। মিখাইল উলিয়ানভ নামের ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) যে কথা বলছে, রাশিয়া প্রাথমিকভাবে তা সমর্থন করে। আইএইএ-এর বক্তব্য, ওই পরমাণু কেন্দ্রের পরিধির মধ্যে কোনো সামরিক কার্যকলাপ করা যাবে না। সেখানে সেনাও মোতায়েন রাখা যাবে না।

মিখাইলের বক্তব্য, এই বিষয়ে রাশিয়া দ্বিমত নয়। রাশিয়া আইএইএ-এর অভিমত সমর্থন করে। তবে বিষয়টি কীভাবে লাগু করতে চাইছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি, তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। অন্যদিকে, ইউক্রেনের বক্তব্য, তারা আইএইএ-এর প্রতিনিধিদের কিয়েভে আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিটি পরমাণু শক্তিকেন্দ্র তারা ঘুরে দেখতে পারবেন। ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়া পরমাণু কেন্দ্রের ভিতর গোপন পরীক্ষা চালাচ্ছে বলে ভিতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এমনকি, আইএইএ-এর প্রতিনিধিদেরও নয়। মিখাইল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পরমাণু শক্তি নিয়ে এই বিতর্কের মধ্যে ফের মুখ খুলেছেন জো বাইডেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করলে ভুল করবে। সেক্ষেত্রে যুদ্ধ আরো বড় আকার নেবে। এদিন বাইডেনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন যে, ইউক্রেন বার বার রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করছে। তারই উত্তরে বাইডেন বলেন, ‘রাশিয়া কোনোরকম পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের চেষ্টা করলে মারাত্মক ভুল করবে।’ যদিও এর জবাবে মস্কো ফের জানিয়েছে, তাদের ধারণা ইউক্রেন এমন অস্ত্র প্রয়োগের কথা ভাবছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্ষেত্রে প্রথম ফোনটি করেছেন ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। সুনক জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য আগের মতোই ইউক্রেনকে সমর্থন করবে এবং সাহায্য করবে। বস্তুত, ইউক্রেনকে আরো বেশি সমর্থনের কথা বলেছেন সুনক। সুনক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। সুনক তার জন্য ধন্যবাদও দিয়েছেন। সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি, এফপি, ডিপিএ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.