ইভিএমে সূক্ষ্ম কারচুপি সম্ভব: সাখাওয়াত

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) কারচুপি সম্ভব। আর ব্যালটে যেটা সম্ভব নয়।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিসি ক্যামেরা নিয়ে বিতর্ক আছে। সেটা ভালো হোক, মন্দ হোক। ইভিএম যেখানে ব্যবহার হচ্ছে, ব্যবহার করুন। ব্যালট পেপার নিয়ে গেলেও সেটা ফাইন্ড আউট করা সম্ভব। কিন্তু ইভিএমে সূক্ষ্ম কারচুপি সম্ভব। বাইরে কোনো হইচই নাই, কিছু নাই, অথচ ভেতরে কী হচ্ছে, গাইবান্ধায় যেটা আমরা দেখলাম। অন্য সিস্টেমে হলে (ব্যালট পেপারে কারচুপি) বাইরেও হইচই হতো। সেটা আরও ভালো করে দেখতে পারতেন। কারণ কেন্দ্র ক্যাপচার করতে তো লোকবল লাগবে।

তিনি বলেন, পাঁচ বছর আমাদের যে অভিজ্ঞা হয়েছিল, সেটা ইউনিক। আর কোনো কমিশন সেটা পারেনি। প্রথমেই আমি যেটা বলেছি, গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে যে পদক্ষেপ নিয়েছে আমি তাদের স্বাগত জানিয়েছি। এই পর্যন্ত ঠিক আছে, পরের ধাপগুলোতে যেন স্লিপ না করেন। যদি করেন, তাহলে জাতির কাছে অন্যরকম একটা মেসেজ যাবে, যে আপনারা এইটুকু দেখানোর জন্য করলেন। বাকিটুকু করলেন না। এজন্য আইন আপনাদের শক্ত অবস্থানে যেতে বলেছে, প্লিজ ডু ইট। আর নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে পরিবেশ ঠিক নেই, তাহলে নির্বাচন বন্ধ করতে পারেন। কোথাও কোনো বাধা নেই। কারণ সংবিধানের ১১৯ ধারা বলে আপনার কাজ হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। বাকিটা আপনাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে কোনো কমিশন এর আগে এই কাজটি করতে পারেনি। ৯৪ সালে যদি এটা করা হতো তাহলে আজকের পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। আপনারা নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বা যাদের দিয়ে নির্বাচন করবেন তাদের আত্মবিশ্বাসে আনতে হবে। বরিশালে যেটা ভাইরাল হতে দেখেছি, এখানে ইউএনওকে প্রকেটশন দেওয়া উচিত নির্বাচন কমিশনের।

সবচেয়ে বড় স্ট্রং হচ্ছে সাব কন্টিনেন্টে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে বড়। আড়াই হাজার লোকবল ও অফিস নিয়ে আর কোনো নির্বাচন কমিশনের এটা নেই। তবে লোকগুলোর ব্যবহার করতে হবে। একটা বড় জেলায় ১৬টা পর্যন্ত সংসদীয় আসন। ১০ কোটি ভোটার। এখানে একজন রিটার্নিং অফিসার দিয়ে হবে না। এজন্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে আপনাদের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিস হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এনআইডি (জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ) সরকার কেন নিতে চাচ্ছে? সেটা পরিষ্কার নয়। আর এনআইডির পেছনে এতোগুলো বছর সিস্টেম ডেভেলপ করেছে নির্বাচন কমিশন। এটা যতি আলাদা হয়ে যায়, তাহলে কোনো এক সময় ভোটার লিস্ট নিয়েই কথা ওঠবে, যে কারটা ঠিক। এনআইডি ঠিক না ভোটার তালিকা ঠিক। কারণ কালকে আপনি যেয়ে বলবেন আমার বয়স ৩০ না, আমার বয়স ১৯; ভুল হয়েছে বলে সেটাই করে ফেলল। ভোটার লিস্টটা কী হবে। আল্টিমেটলি এটা নিয়ে একটা গণ্ডগোল হবে। অন্য দেশে যেখানে আলাদা আছে সেখানে তারা এখন নির্বাচন কমিশনকে বলছে, ভোটার লিস্ট এটা নিয়ে একটা গণ্ডগোল হচ্ছে। আর সরকার চাইলে সেটা করতে পারে।

আর আপনাদের এখান থেকে আমার কী করার আছে এটা না বলে কথা বলুন। এই সরকারের আমলেই আমরা এটা করেছি, তো এখন কেন নিতে চাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নির্বাচন সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী তারা নির্বাচন করার জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন।

গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে কারা দোষী তাদের বের করে যদি ব্যবস্থা নিতে না পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে আর আস্থা পাবেন না। কাজেই এটা করতে হবে। শুধু বন্ধ করলাম তা নয়। যে ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যে কর্মকর্তারা চিঠি দিয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আব্দুর রউফ, কে এম নূরুল হুদা, কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, সাবেক ইসি সচিব মোহাম্মাদ সাদিক, মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দীন আহমেদ এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমান অংশ নেন।

এছাড়াও বর্তমান সিইসি, অন্য নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.