‘জন্মদিনের অনুষ্ঠানে না যাওয়ায়’ সাংবাদিককে মারধর ছাত্রলীগের

জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কর্মরত একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিককে মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা চবি ছাত্রলীগের ‘বিজয়’ গ্রুপের অনুসারী।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার সাংবাদিক চবির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী রেদওয়ান আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং হামলাকারীদের বিচার ও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল ছাত্রলীগ কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলামের জন্মদিন ছিল। সে উপলক্ষে বিজয় হলের নেতা-কর্মীরা কেক কাটার আয়োজন করেন৷ রাত ১১টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা এ এফ রহমান হলের সামনে জড়ো হন৷ তাদের মধ্যে কয়েকজন রিদওয়ানকে ওই আয়োজনে অংশ নিতে বলেন৷ রিদওয়ান এ এফ রহমান হলের ২১২ নম্বর কক্ষে থাকেন৷

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রিদওয়ান বলেন, আমার পরীক্ষা চলছে, আমি পড়াশোনা করছিলাম। রাত ১১টার দিকে লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী আরশিল আজিম, একই বর্ষের নাট্যকলা বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শোয়েব আতিক আমার কক্ষে আসেন এবং কেক কাটার অনুষ্ঠানে কেন যাইনি জানতে চান৷ আমি তাদেরকে একজন সিনিয়রের মাধ্যমে বুঝিয়ে বলি, আমি সাংবাদিকতা করছি বলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকা সম্ভব নয়।

রেদওয়ান আরও বলেন, প্রথম দফায় চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার এসে আবার একই প্রশ্ন করতে থাকে তারা। এরপর এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের ওই ৩ কর্মীর মধ্যে আরশিল আজিম আমাকে বলেন, তুই যে ছাত্রলীগের ফাংশনে যাস না, তোকে মারলে তখন কে দেখবে? তখন আমি বলি, আমাকে কেন মারবে! আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। আরশিল তখন আতিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই ওরে মার। নির্দেশ পেয়ে আতিক আমাকে কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় দেন৷ মারধর করার পরে তারা রাতেই আমাকে হল ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এ সময় সেখানে বিজয় গ্রুপের ১০ থেকে ১২ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই বিজয় গ্রুপের নেতা ইলিয়াসের অনুসারী বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু বকর বলেন, ‘আমি সঙ্গে ছিলাম ঠিকই কিন্তু মারধর কিংবা কোনো হুমকি দেইনি। এসব শোয়েব ও আরশিল করেছে।’

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, ‘সাংবাদিক কেন, সাধারণ শিক্ষার্থীকেও মারধরের অধিকার কারো নেই৷ যারা মারধরের ঘটনায় জড়িত তারা কেউই ছাত্রলীগের পদে নেই৷ তাই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে আগামীতে যেন তারা ছাত্রলীগের কোনো পদে না আসেন, সে বিষয়টি দেখা হবে৷ আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে সেটাই চাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় ইতোমধ্যে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ভুক্তভোগীর সঙ্গেও কথা হয়েছে৷ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.