আবারও ইভ্যালি চালুর আবেদন

আবারও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি চালু করতে আদালতের মাধ্যমে গঠিত বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। আবেদনে তিনি নিজেকে এবং তার মা ও বোনের স্বামীকে পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বুধবার (১০ আগস্ট) শামীমা নাসরিনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম এ আবেদন করেন। এছাড়া হাইকোর্টেও আরেকটি আবেদন করা হয়েছে। সে আবেদনে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠতা মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে যেন অযথা মামলা দিয়ে হয়রানি না করা হয়, তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গত বছরের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাইকোর্ট। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ওএসডিতে থাকা আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

আদেশে বোর্ডের কাজ কী সেটিও বলে দেওয়া হয়; কোম্পানির কোথায় কী আছে, সবকিছু বুঝে নেবে বোর্ড। আরও বলা হয়, কোম্পানি যেভাবে চলে, সেভাবে প্রথমে বোর্ড মিটিং বসবে। এরপর সবকিছু করার পর বোর্ড যদি দেখে কোম্পানিটি চলার যোগ্যতা নেই, তখন অবসায়নের জন্য প্রসিড (প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া) করবে। আর যদি চালানো সম্ভব, তাহলে কোম্পানিটি চলবে।

এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ইভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-বোন আদালতে সশরীরে হাজির হন। তারা আদালতকে জানান, ইভ্যালি পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছেন। যারা ইভ্যালির কাছে টাকা-পয়সা ও পণ্য পাবেন সেগুলো ফেরত দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চান তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একটা ডিরেকশন দেন, যাতে ইভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যানের যে শেয়ারগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে কিছু সংখ্যক শেয়ার যেন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।

গত তিন মাস ধরে ইভ্যালির কেনা-বেচা এবং পণ্য সরবরাহের কাজ বন্ধ রয়েছে উল্লেখ করে তারা আরও জানান, পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির আয়ের কোনও সংস্থান নেই। কিন্তু ব্যয় আগের মতোই রয়েছে। ইভ্যালির ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বন্ধ রয়েছে। ফেসবুক পেজেও গত বছরের ১৮ অক্টোবরের পর নতুন কোনও আপডেট আসেনি।

পরে রাসেল ও শামীমার আত্মীয়-স্বজনদের মৌখিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একইদিন (৯ ফেব্রুয়ারি) ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের কিছু সংখ্যক শেয়ার তার আত্মীয়-স্বজনের নামে হস্তান্তরে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ইভ্যালির অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা বোর্ডকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১৯ এপ্রিল ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে করা রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের আবেদন গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। আদালত আদেশে বলেন, এখন থেকে এ রিট মামলায় শামীমা নাসরিন ১৫ নম্বর বিবাদী হিসেবে গণ্য হবেন।

ওই দিন রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন বলেন, ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে করা রিট মামলায় পক্ষভুক্ত আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, কোম্পানিতে যে ৫০ ভাগ শেয়ার ছিল, তার মধ্যে ২০ ভাগ শেয়ার এরইমধ্যে তিনি নিজের মা ও বোনের স্বামীর নামে হস্তান্তর করেছেন। যখন এ মামলা দায়ের করা হয়, তখন এ মামলার বিবাদী হিসেবে তিনি ছিলেন না। তিনি আজকের আবেদনে বলেছেন, তাকে যেন এই মামলা বিবাদী হিসেবে গণ্য করা হয়। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ মর্মে আদেশ দেন এখন থেকে শামীমা নাসরিন এই মামলায় ১৫ নম্বর বিবাদী হিসেবে গণ্য হবেন।

এরপর গত ২৭ এপ্রিল ইভ্যালির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিকাশ, নগদ ও চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে কত টাকা প্রদান করেছেন সেই তথ্য দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিকাশ ও নগদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিও’কে এ তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় ইভ্যালির মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.