সোহানের লড়াকু ইনিংসের পরও বাংলাদেশের হার

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তারুণ্য নির্ভর দলটাকেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ধরা হচ্ছে। তবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দারুণ ব্যাটিংয়ের পরও ১৭ রানে হারতে হয়েছে টাইগারদের। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধোনা করে ২০৫ রান সংগ্রহ করেছিল স্বাগতিকরা। জবাবে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের অপরাজিত ৪২ রানে ১৮৮ রানে থামে টাইগারদের ইনিংস।

জিম্বাবুয়ের দেয়া বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মুনিম শাহরিয়ারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। টাইগার এই ওপেনার ওয়েসলি মাধেভেরের অফ স্টাম্পের বাইরের বড় তাড়া উড়িয়ে মারতে গিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে তানাকা চিভাঙ্গার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। মুনিম ফিরে গেলেও এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন লিটন দাস। ভালো শুরু পেলেও অদ্ভুত এক রান আউটে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে লিটনকে। শেন উইলিয়ামসের বলে শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন লিটন। যদিও সেখানে ফিল্ডিং করা এনগারাভা সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি। উল্টো রান আউট হয়েছেন লিটন। ফলে তার ১৯ বলে ৩২ রানের ইনিংস শেষ হয়েছে।

লিটন ফিরে গেলেও রানের চাকা সচল রেখেছিলেন বিজয়। সিকান্দার রাজার চতুর্থ বলে স্লগ সুইপ করে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কার মারার পরের বলেই আউট হয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। রাজার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে থাকা মিল্টন শুম্বাকে ক্যাচ দিয়ে ২৬ রানে ফেরেন বিজয়। এরপর দ্রুত আরও বেশ কয়েকটি উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। লুক জংউইকের করা ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে উড়িয়ে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন আফিফ হোসেন। যদিও ব্যাটে বলে ঠিক মতো করতে পারেননি তিনি। ফলে ওয়েলিংটন মাসাকাদজার সহজ ক্যাচ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে।

একপ্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশের রান বাড়াচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি জংউইয়ের বলে চড়াও হতে গিয়ে টপ এজ হয়ে আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ৩৭ রানে। এর ফলে বাংলাদেশের পঞ্চম উইকেটের পতন হয়। সোহান শুরু থেকেই ঝড়ো ব্যাটিং করে ভালো কিছুই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যদিও অন্যপ্রান্তে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। মোসাদ্দেক ১৯তম ওভারে রানের চাপে বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি এনগারাভার হাই ফুলটসে কাট করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন শুম্বার হাতে। এর ফলে জয়ের আশাও অনেকাংশে নিভে যায় বাংলাদেশের। সোহান অপরাজিত থাকলেও টাইগারদের প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারেননি। এই জয়ের ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে।

এর আগে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। প্রথম ওভারে ৮ রান করলেও দ্বিতীয় ওভারে রোডেশিয়ানরা নিতে পারে মাত্র ৪ রান। প্রথম দুই ওভারে কোনো উইকেট না হারালেও পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানকে উইকেট দেয় জিম্বাবুয়ে। বাঁহাতি এই পেসারের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দেন রেজিস চাকাভা।

অনেকটা উপরে ওঠা ক্যাচ শান্ত লুফে নিলে মাত্র ৮ রানে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় জিম্বাবুয়ের এই ডানহাতি ওপেনারকে। চাকাভা ফিরলেও মুস্তাফিজের পরের বলেই এক্সট্রা কভার দিয়ে চার মারেন ক্রেইগ আরভিন। চাকাভাকে হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও সেটা কাজে আসেনি জিম্বাবুয়ের। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

সপ্তম ওভারের প্রথম বলে মোসাদ্দেকের দ্রুতগতির ডেলিভারি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন আরভিন। জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে ২১ রান। এদিকে ৪৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দারুণ এক জুটি গড়েন শন উইলিয়ামস এবং মাধেভেরে। শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করেন উইলিয়ামস। তাদের জমে ওঠা জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ।

বাঁহাতি এই পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। চারটি চার এবং একটি ছক্কায় ১৯ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেছেন উইলিয়ামস। বাঁহাতি এই ব্যাটার ফেরার পর দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মাধেভেরে। তাসকিনের শর্ট ডেলিভারিতে এক্সট্রা কভার দিয়ে চার মেরে ৩৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পর আরও আক্রমণাত্বক হয়ে উঠেন মাধেভেরে।

শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করেন মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজা। ‍মুস্তাফিজের ওভারে ৩ চারে ১৪ নেয়ার পর শরিফুলের ওপর চড়াও হন তারা দুজন। দুই ছক্কা ও এক চারে ১৯তম ওভারে আসে ১৯ রান। ইনিংসের শেষ ওভারে মুস্তাফিজের ইয়র্কার লেংথের ডেলিভারিকে দুই রান নিয়ে ২৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন রাজা। এদিকে তিন বল বাকি থাকতে চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন ৬৭ রান করা মাধেভেরে। দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৬৫ রানে অপরাজিত থাকেন রাজা। বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিংয়ের দিনে শেষ ৫ ওভারে ৭৭ রান তুলেছে জিম্বাবুয়ে। এদিকে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো ২০০ পেরিয়েছে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ দুটি এবং মোসাদ্দেক একটি উইকেট নিয়েছেন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.